মোঃ নূরে আলম :: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দীর্ঘ ক্ষমতায়নশীল ১৪ দলীয় মহজোট সরকারের পতনে রাষ্ট্র সংস্কারে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ গুণগত সংস্কারের মাধ্যমে একটি পরিচ্ছন্ন সরকার নেতৃত্বে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সারাধণ জনগণের। আগামী জাতীয় নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায়, কবে, কখন অনুষ্ঠিত হবে এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি নোবেল জয়ী ইউনুস সরকার।
এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কারা, বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। সম্প্রতি তথ্য উপদেষ্টা এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগকে আগে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে, স্বৈরাচারের বিচার নিশ্চিত হতে হবে, গণহত্যার বিচার হবে, তারপর সিদ্ধান্ত হবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার ব্যাপারে।
এতো ক্ষমতা, এতো লোকোক্তি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কেনো কঠোর অবস্থানে রাজপথে দাঁড়াতে পারেনি আওয়ামী লীগ? কেনো পুলিশ নির্ভর হতে হয়েছে? কেনো ছাত্রদের সামনে পুলিশকে দাঁড় করানো হয়েছে? ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারবার বলেছে “ঢাকা মহানগর” আওয়ামী লীগের প্রাণ, চালিকাশক্তি! তাহলে কেনো সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ এতটা দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটালো? এ বিষয় গুলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো ওয়ার্ড বা থানা কমিটি ছিলো না ক্ষমতাসীন দলের। অন্ত কোন্দলে জর্জরিত ছিল দলটির তৃণমূল। উড়ে এসে অনেকে জুড়ে বসে অনেকে এমপি হয়ে, ব্যবসায়িক কোটায় এমপি হয়ে, কেউ আবার কূটনৈতিক শক্তিতে এমপি বনে যান, যার ফলে তৃণমূল আওয়ামী লীগের স্পন্দন বুঝতে পারেনি অনেক সাংসদই। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর-দক্ষিণের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতারা নিজেদের বলয় তৈরিতে সব-সময় ব্যস্ত সময় পার করলেও তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে ব্যর্থ হয়েছেন শতভাগ। সাংগঠনিকভাবে তারা ব্যর্থ হলেও আর্থিকভাবে হয়েছেন ব্যাপক লাভবান। উত্তর-দক্ষিণের ওয়ার্ড প্রতি সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক পদের বিপরীতে গুনতে হয়েছে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা। থানার পদের জন্য ডাবল! আবার কোথাও কোথাও এক পদের বিপরীতে দুই বা একাধিক ব্যক্তির থেকে সুবিধা নিয়েছেন দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতারা এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের কালো থাবায় আবদ্ধ ছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। উত্তরের কমিটিতে শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও শেখ রেহেনার তদবির বা পছন্দের তালিকায় আবদ্ধ ছিলো। যার ফলে কোনো ওয়ার্ড ও থানা কমিটি ছিল না উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের। একই অবস্থা ছিল অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলোতেও। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মণির হাতে গড়া যুব সংগঠনের দায়িত্ব দেয়া হয় তারই পুত্র শেখ ফজলে শামস পরশের হাতে। কিন্তু বাস্তব অর্থে পরশের নেতৃত্বে যুবলীগ হারিয়েছে যৌবনের শক্তি, সংগঠনের ঐতিহ্য। সাংগঠনিকভাবে চরম ক্লান্তি কাল দেখেছে যুবলীগ। বিভিন্ন স্থানে সম্মেলন করেও কমিটি দিতে না পারা, কমিটি গঠনে পরশের স্ত্রীর হস্তক্ষেপ, ঢাকা মহানগরে অনেক ওয়ার্ডে ১৮-২০ বছরের অকেজো কমিটি, যেখানে কোনো নেতৃত্ব ছিলো না সেখানেও কমিটি দিতে পারেনি যুবলীগ। আলোচিত ক্যাসিনো কান্ডের পর যে আশার আলো জ্বালিয়ে পরশ-নিখিল কমিটি দেয়া হয়েছিল তার বিন্দু পরিমাণ পূরন করতে পারেন এই নেতৃত্ব!
এ ধরনের নানা অনিয়মের কারণে তৃণমূলে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলেও মাঠের রাজনীতিতে ছিলেন গা-ছাড়া। দলের এ নেতৃত্ব শূন্য সময়ে অসহায় নেতাকর্মীদের অনেকেই বলছেন, দল ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকলেও তাদের বিন্দু পরিমান ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তবে তারা মনে প্রাণে আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে। কিন্তু তারাও আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ব্যবহার করে দুর্নীতি, অনিয়ম, অপব্যবহার ও অন্যায়-অপরাধ করেছে তাদের বিচার প্রত্যাশা করেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগের নিবেদিত নেতাকর্মীরাও চায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দলটি কালিমামুক্ত হোক, দেশের নেতৃত্বে আসুক। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি ৯০ শতাংশ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সমর্থন আকাশচুম্বী।
Leave a Reply