1. admin@unlimitednews24.com : Un24admin :
‘মালয়েশিয়া চক্রে’ চার এমপির প্রতিষ্ঠান
November 22, 2024, 9:57 pm

‘মালয়েশিয়া চক্রে’ চার এমপির প্রতিষ্ঠান

  • Update Time : Saturday, June 1, 2024
  • 62
‘মালয়েশিয়া চক্রে’ চার এমপির প্রতিষ্ঠান
‘মালয়েশিয়া চক্রে’ চার এমপির প্রতিষ্ঠান

আনলিমিটেড ডেস্ক নিউজঃ ‘মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট চক্র’র মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা সেদেশে কর্মী পাঠানোর সুযোগ পান। এই চক্রে সব এজেন্সি সুযোগ পায় না। এ চক্রে নাম ঢোকাতে প্রতিটি এজেন্সির কাছ থেকে নেয়া হয় বড় অঙ্কের টাকা। শুরুতে চক্রের সদস্য ছিল ২৫টি এজেন্সি। তিন ধাপে পরে বেড়ে হয় ১০০টি। চক্রে থাকা এজেন্সিগুলো বসে বসে প্রতি কর্মীর বিপরীতে অন্তত দেড় লাখ টাকা ‘চক্র ফি’ পাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় ১৪টি দেশ কর্মী পাঠায়। তবে বাংলাদেশ ছাড়া কোনো দেশে এমন চক্র-ব্যবস্থা নেই।

ফেনী থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বিদেশে কর্মী পাঠাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড। লাইসেন্স নেয়ার সাড়ে তিন বছরে মাত্র ১০০ কর্মী বিদেশে পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি। অবশ্য ‘মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটে’ বা চক্রে যোগ দেওয়ার পর গত দেড় বছরে নিজাম হাজারীর এজেন্সির নামে দেশটিতে প্রায় ৮ হাজার কর্মী গেছেন। মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বেশি কর্মী পাঠানো এজেন্সির তালিকায় ৪ নম্বর স্থান পেয়েছে স্নিগ্ধা ওভারসিজ।

আরো দুজন সংসদ সদস্য এবং একজন সংসদ সদস্যের পরিবারের দুজন সদস্যের রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে এই চক্রে। সেগুলো হলো- ফেনী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরীর ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল ও ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল। সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ ও মেয়ে নাফিসা কামালের অরবিটালস ইন্টারন্যাশনাল। ১৯৭৯ সালে মুস্তফা কামাল অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠা করেন।

পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর এবং এ খাতের নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান বিপুলসংখ্যক কর্মী পাঠাচ্ছে। আবার যারা চক্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, তারা ও তাদের স্বজনদের প্রতিষ্ঠানও চক্রে ঢুকে গেলেও অনেক পুরোনো প্রতিষ্ঠান জায়গা পায়নি।

যদিও বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেকেই মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ পাচ্ছেন না। কেউ কেউ ঋণ করে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসছেন।

গত ১৯ এপ্রিল জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) ওয়েবসাইটে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে এক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেকেই দুর্বিষহ, মানবেতর ও অমর্যাদাকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। চাকরির ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

এ অবস্থায় আপাতত বিদেশি কর্মী নেয়া স্থগিত করেছে মালয়েশিয়া। এরই মধ্যে যারা মালয়েশিয়া যাওয়ার ভিসা পেয়েছেন, অনুমোদন পেয়েছেন, তাদেরকে শুক্রবারের মধ্যে দেশটিতে প্রবেশ করতে হবে।

প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালের জুলাইয়ে যখন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলে, তখন কর্মী পাঠানোর জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনের দায়িত্ব পায় মালয়েশিয়া। তাদের কাছে ১ হাজার ৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠিয়েছিল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কিন্তু বেছে নেয়া হয় মাত্র ২৫টিকে। এজেন্সি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নীতিমালা ছিল না। এক্ষেত্রে প্রভাব খাটানো ও ঘুষ লেনদেনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

সংসদ সদস্যের প্রতিষ্ঠান:

গত দেড় বছরে মালয়েশিয়া যেতে প্রায় সাড়ে চার লাখ কর্মীর ছাড়পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মালয়েশিয়ায় এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বায়রার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিএমইটি বলছে, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠিয়েছে। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে এই এজেন্সি একাই ৮ হাজার ৫৯২ কর্মীর ছাড়পত্র নিয়েছ।

যেভাবে চক্রে প্রবেশ:

অভিযোগে জানা যায়, এবার চক্র তৈরিতে নেতৃত্ব দেন বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন ওরফে স্বপন। চক্রের ১০০টি এজেন্সির মধ্যে ৬৯টির নাম তিনি ঠিক করেছেন। তার মাধ্যমেই মালয়েশিয়ায় টাকা লেনদেন হয়। বিএমইটির হিসাবে দেখা যায়, স্বপনের এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের নামে মালয়েশিয়ায় ৭ হাজার ১০২ শ্রমিক গেছেন।

অভিজ্ঞতা না থাকলেও চক্রে ঢুকেই ব্যবসা রমরমা:

কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও চক্রে ঢুকে কর্মী পাঠানো শীর্ষ এজেন্সির তালিকায় চলে এসেছে ঢাকা উত্তর সিটির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের (ভাটারা এলাকা) কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলামের এজেন্সি বিএম ট্রাভেলস লিমিটেড। ৭ হাজার ২২৫টি ছাড়পত্র নিয়েছে তার এজেন্সি। বায়রার একাধিক সদস্যের দাবি, চক্র তৈরিতে নেতৃত্ব দেওয়া রুহুল আমিনের সঙ্গে সখ্য আছে কাউন্সিলর শফিকুলের।

২০২২ সালের জুলাইয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নিয়ে চক্রে নাম লেখান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ। তার প্রতিষ্ঠান অনন্য অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সি ২ হাজার ৬০০ কর্মীর ছাড়পত্র নিয়েছে।

নতুন আরো কিছু প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে বিপুল কর্মী পাঠিয়েছে। ২০২১ সালের মার্চে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেয় ইম্পেরিয়াল ওভারসিজ। ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ৩৪৪ জন কর্মী পাঠিয়েছিল তারা। তবে মালয়েশিয়ার চক্রে ঢুকে দেড় বছরে কর্মী পাঠিয়েছে ৭ হাজারের বেশি।

২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য:

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার-নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা। যদিও নেওয়া হয় অনেক বেশি। ২০২৩ সালের মে থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ৩৫৭ জন মালয়েশিয়াপ্রবাসীর সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি জরিপ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ভেরিটে ইনকরপোরেটেডসহ পাঁচটি সংস্থা। এতে বলা হয়, মালয়েশিয়া যেতে গড়ে একজন বাংলাদেশি কর্মী খরচ করেছেন ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ৯৬ শতাংশ কর্মীকে অন্তত একটি উৎস থেকে ঋণ নিতে হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ খাতে দেড় বছরে সাড়ে ৪ লাখের মতো লোক পাঠিয়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে বেশি নেয়া হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জনপ্রতি দেড় লাখ টাকা করে চক্র ফি নেয়া হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

মেলে না প্রতিশ্রুত কাজ:

নারায়ণগঞ্জের মো. সেলিম গত বছর মার্চে মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রতিশ্রুত কাজ পাননি। নির্মাণশ্রমিক হিসেবে তাকে পাইলিংয়ের কাজ দেওয়া হয়। পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান তিনি। কোনো চিকিৎসা করায়নি কোম্পানি। প্রায় দেড় মাস অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থেকে তিনি বাধ্য হয়ে নিজের টাকায় টিকিট কেটে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরে আসেন।

সেলিম বলেন, অটোরিকশা ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে, মানুষের কাছে ঋণ করে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলাম। এখন আমি নিঃস্ব, ঋণগ্রস্ত।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 unlimitednews24
Web Design By Best Web BD