আনলিমিটেড নিউজঃ সাবেক শিক্ষা সচিব ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দীর্ঘ দিন যাবত বন্ধ থাকা আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড অবশেষে চালু করা হয়েছে।নিজস্ব ল্যাব রিপোর্ট অনুযায়ী উৎপাদিত ফিটকিরির পিএইচ মান ২.৮৮। আনানের বর্তমান ক্যাপাসিটিতে দৈনিক ২০ মে: টন ফিটকিরি উৎপাদন করা সম্ভব। তবে অদূর ভবিষ্যতে এ ক্যাপাসিটি আরো বৃদ্ধি করা যাবে।আজকের উৎপাদিত ফিটকিরির পিএইচ মান প্রত্যাশিত ৩.৫ হবে।
আজ শুক্রবার আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডএর ফিটকিরি কারখানা পুন:চালুকরণ ও মতবিনিময় বিষয়ক অনুষ্ঠানের এ কথা বলেন সাবেক শিক্ষা সচিব ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আনানের আরেকটি সম্ভবনার দিক হলো কারখানার অভ্যন্তরে একটি সালফিউরিক এসিড প্লান্টের ফাউন্ডেশনের কাজ প্রায় সমাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। ফিটকিরি উৎপাদনের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল সাফফিউরিক এসিড। সালফিউরিক এসিড আনান নিজে উৎপাদন করে ফিটকিরি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার সম্ভব হলে ফিটকিরির উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাবে। ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে ফিটকিরি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ দেশে শিল্পোন্নয়নে আনান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
তিনি বলেন, সর্বোপরি আনান একটি অত্যন্ত সম্ভবনাময় ও লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্য এদেশের মানুষের চাহিদা পুরণের জন্যই গড়ে তোলা হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের জন্য ফিটকিরিকে সস্তা, কার্যকর ও উপযুক্ত জীবানুনাশক ঔষধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অতি প্রচীনকাল থেকে এন্টিসেপটিক হিসেবে ফিটকিরির বহুল ব্যবহার রয়েছে। এ কারখানাটি দেশের একটি মূল্যবান সম্পদ। এ কারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা জাতীয় স্বার্থেই প্রয়োজন। পরিচালনা পর্ষদ আনানের বর্তমান সন্ধিক্ষণে কারখানাটি সচল রাখতে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে যথাযথ ভূমিকা রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছে।
সাবেক শিক্ষা সচিব বলেন,আনানের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে আনানের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রয়োজনীয় সনদপত্রগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে ছিল। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ সনদপত্রগুলো হালনাগাদকরণের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, আরজেএসসি এর ৯ ও ১২ হালনাগাদকরণ, পরিবেশগত ছাড়পত্র নবায়ন, মানিকগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সদস্যপদ গ্রহণ করা হয়েছে। কলকারখানা লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, এসিড ব্যবহার ও পরিবহণ, আমদানি লাইসেন্স নবায়নের বিষয়টি চলমান রয়েছে। এছাড়া আনানের জমির খাজনা প্রদানসহ বিগত বছরগুলোর ট্যাক্স ও ভ্যাট সংক্রান্ত কার্যক্রম হালনাগাদকরণের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। আশা করা যায়, চলতি মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় সনদপত্রগুলো হালনাগাদকরণ সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, পূর্বে আনানের ফায়ার লাইসেন্স থাকলেও অনুমোদিত কোন ফায়ার সেফটি প্লান ছিল না। পরিচালনা পর্ষদ ফায়ার সেফটি প্লান প্রণয়ন পূর্বক তা যথানিয়মে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদন গ্রহণের ব্যবস্থা নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড একটি সম্ভবনাময় ফিটকিরি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উৎপাদিত ফিটকিরির সিংহভাগের ক্রেতা ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা। আদালতে মামলার প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পুন:চালুকরণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। গত ২০২২ সালে ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক এর সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুর্নগঠন করেন। পুর্নগঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হলে তিনি এক বছর কিছুই করতে পারেনি। পরে সরকার আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। আমি নিয়োগ পেয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট শিল্পপতি মো. নুরুল হাসান মিয়া এবং পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্নেল মো. মনিরুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ি মোহাম্মদ ইকবাল জামাল ও বিশিষ্ট একাউন্টিং প্রফেসনাল মুহাম্মদ সাজিদুল হক তালুকদারদের দায়িত্ব প্রদান করেন। পরিচালনা পর্ষদের চেয়াম্যান হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগ ১৯ জুন ২০২৩ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মো: রাশেদুল ইসলামকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করেন। আদের নিয়ে এ কোম্পানিটি চালু করার উদ্যাগ গ্রহণ করি।
সাবেক সচিব বলেন,দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এবং আর্থিক সংকটের কারণে আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর পূর্বভাকুম,জয়মন্টপ, সিংগাইর, মানিকগঞ্জে অবস্থিত ফিটকিরি কারখানাটি বিদ্যুতবিচ্ছিন্ন, অরক্ষিত ও অনিরাপদ অবস্থায় থাকায় কারখানায় কয়েক দফা চুরি-ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে। কারখানায় ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতিসহ ফিটকিরি প্লান্টের বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। দীর্ঘদিন অরক্ষিত ও বন্ধ থাকায় এবং এসিড ট্যাংকগুলোর ভিতর দীর্ঘদিন এসিড জমা থাকার কারনে ট্যাংকগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। কারখানার অভ্যন্তর বন-জঙ্গলে ভরে যায়। অন্যদিকে আনানের ঢাকাস্থ ভাড়ায় চালিত অফিসটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আনানের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পাওয়া যায়নি। রহমান কেমিক্যাল লি: নিকট রক্ষিত কিছু নথিপত্র ও কারখানা ল্যাবের কিছু পুরাতন যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করা হয়। অফিস সরঞ্জামাদির মধ্যে কারখানার অফিসভবনে গুটি কয়েক টেবিল ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ২০২২ সালে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক পুর্নগঠিত পর্ষদ আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর কারখানাটি পুন:চালুকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও আর্থিক সংকটের কারণে কোন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। গত বছর জুলাই মাসে চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম-এর নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় রহমান কেমিক্যাল লি: হতে সংগ্রহকৃত পুরাতন নথিপত্র পর্যালোচনায় কিছু পে-অর্ডার পাওয়া উদ্ধার করা হয়। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান এর আন্তরিক সহযোগিতায় আনানের বকেয়া পাওনা আদায় সম্ভব হয়। অরক্ষিত ও অনিরাপদ অবস্থায় পড়ে থাকা কারখানার প্লান্ট মেরামত, মেরামতের অযোগ্য যন্ত্রাংশ পুন:সংযোজনসহ কারখানাটিকে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করা উল্লেখ্যযোগ্য। এছাড়াও কারখানাস্থলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় স্থাপন, ঢাকায় লিয়াঁজো অফিস স্থাপন, কারখানায় কর্তব্যরত স্টাফদের বসবাসের জন্য কারখানার অভ্যন্তরে পরিবেশ সম্মত ডরমিটরি ভবন নির্মাণ, কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ও কাঁচামাল মজুত রাখার জন্য কারখানার পাশে অবস্থিত গোডাউনটি আংশিক মেরামত, কারখানার অভ্যন্তরের বন জঙ্গল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নকরণ পূর্বক পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষরোপণ, সৌন্দয্র্ বর্ধনের জন্য সৌন্দর্যবর্ধক বৃক্ষরোপণ করা হয়। এখানে উল্লেখ্য, কারখানার স্টাফদের জন্য নির্মিত ঘরগুলো অকেজো ও ভাংঙ্গা অবস্থায় পাওয়া যায়। কারখানার গোডাউনের ছাউনিতে ব্যবহৃত প্রোফাইসীটগুলো মরিচা পড়ে নষ্ট অবস্থায় পাওয়া যায়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কোম্পানির চোয়ারম্যান সাবেক অতিরিক্ত সচিব রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মেফতাউল করিম, সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, কাজী আলমগীর, এনামুল হাসান, মশিউর রহমান প্রমুখ।
Leave a Reply