আনলিমিটেড নিউজঃ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি। খোকন ইস্যুতে বিএনপির সিনিয়র নেতাসহ দলীয় আইনজীবী নেতারাও দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে পারছে না দলটি। তবে দলের কোনো কোনো নেতা কারণ দর্শানো নোটিশসহ খোকনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে দলের শীর্ষ নেতাকে পরামর্শ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গত কয়কদিন ধরে আলোচনার পর ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিষয়টি গত সোমবার (২২ এপ্রিল) রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকেও তোলা হয়। খোকন ইস্যুতে আলোচনা খুব বেশি দূর এগোয়নি বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সংবাদমাধ্যমে বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠন। এখানে কিছু হলে তো আমাদের মাঝে অস্বস্তি হবেই। তারপরও আমি মনে করি এর একটি সহজ সমাধান হওয়া উচিত।
তবে দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন ভেতরে ভেতরে ছিল, এখন তা প্রকাশ্যে আসছে। এই নিয়ে ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন মুখোমুখি। কায়সার কামাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামকে পরিবর্তন করে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম করে। ফোরামের তো গঠনতন্ত্রই নেই। সে (কায়সার কামাল) কীভাবে বহিষ্কার করে? তার ক্ষমতা আছে বহিষ্কার করার? যে পর্যন্ত গঠনতন্ত্র না হবে, সে পর্যন্ত কাউকে বহিষ্কার করা যাবে না। এ সময় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কায়সার কামালের ভূমিকা তদন্ত করার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে নেতারা বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একটি সংগঠন। সুতরাং খোকন ইস্যুতে বিএনপিকেও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়া উচিত। এ সময় দলের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, এটি (খোকনকে অব্যাহতি) জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি নিয়ে আমাদের আলোচনার এখতিয়ার নেই। এরপর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলোচনা না বাড়িয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপ করবেন বলে বিষয়টির ইতি টানেন।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার ফোরামের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির পদ থেকে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এরপর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ নিয়ে কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেন। তারপর থেকে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যুগ্ম মহাসচিব পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে খোকনকে। তবে দলের সিনিয়র এক নেতার ভাষ্য, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও সময় নিয়ে খোকনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
গত ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) প্রার্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ঐ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফলের অভিযোগ এনে বিজয়ী সভাপতিসহ আরো তিনজন সদস্যকে এ মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ না করার আহ্বান জানান। কিন্তু মাহবুব উদ্দিন খোকন দায়িত্ব নেন। এ কারণে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
গত ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) প্রার্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ঐ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফলের অভিযোগ এনে বিজয়ী সভাপতিসহ আরো তিনজন সদস্যকে এ মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ না করার আহ্বান জানান।
সামনে আনবে সরকারের দুর্নীতির চিত্র: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতি এবং ব্যাংকিং খাত ও অর্থনীতির দুরবস্থার প্রকৃত চিত্র কীভাবে সামনে আনা যায়- তা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগির সংবাদ সম্মেলন, বিবৃতি, সভা-সেমিনারের মাধ্যমে সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হতে পারে বলেও বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বেনজীর নিয়ে আলোচনা: বৈঠকে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদের বিষয়টি আলোচনায় আসে। নেতারা মনে করেন, সরকার চাইবে না এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হোক। কারণ বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে সে দায় সরকারের ওপরও বর্তাবে। এ ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলা রাজনৈতিক নয় মর্মে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে স্থায়ী কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর ঐ বক্তব্যের জবাব দিতে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য-উপাত্তসহ রাজনৈতিক মামলার হিসাব তুলে ধরতে পারে দলটি।
ফরিদপুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন: বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফরিদপুরের মধুখালী মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি স্কুলে দুই শ্রমিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিএনপি।
দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। কমিটির সদস্যরা হলেন- চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাশ অপু ও নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
Leave a Reply