আনলিমিটেড ডেস্ক নিউজঃ মাহে রমজান আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাস। সামাজিক সহমর্মিতার মাস। দুস্থ-বঞ্চিত-অভাবী ক্ষুধিতের কষ্ট অনুধাবনের সুযোগ আসে এই মাস। পাশাপাশি সামাজিক ফিটনেস বাড়ানোর সুযোগও আমরা নিতে পারি কিছু করণীয় ও বর্জনীয় অনুসরণের মধ্য দিয়ে।
সবাইকে আগে সালাম দিন। সালাম একজন বিশ্বাসীর প্রতি আরেক বিশ্বাসীর হক (অধিকার)। সালামের চর্চা বাড়ায় সামাজিক বন্ধন। সালামের মাধ্যমে আমরা অন্যের শান্তি কামনা করতে পারি। আন্তরিকতা, শুভেচ্ছার চেয়ে বড় প্রকাশ আর কী হতে পার।
নবীজি (সা.) সবসময় আগে সালাম দিতেন। আমরাও রমজানে সবাইকে আগে সালাম দেয়ার চর্চা শুরু করতে পারি। যার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে স্পষ্টভাবে সুন্দর উচ্চারণে বলুন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। কেউ সালাম দিলে প্রত্যুত্তরে আরও সুন্দরভাবে বিনয়ের সঙ্গে বলিÑ ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম’। সালাম ও তার জবাবের এই সুন্দর চর্চা বাড়াবে আপনার বিশেষ সৌন্দর্য বা ফিটনেস।
সামাজিক ফিটনেসের প্রথম শর্ত হলো সামাজিক হওয়া। অর্থাৎ সমাজের অংশ হওয়া।
চারপাশের মানুষ আপনাকে দেখলে কতটা আপন মনে করেন বা আপনার উপস্থিতি তাদের কতটা তৃপ্তি দেয়; কতটা তারা আপনাকে কাছের মনে করেনÑএটাই আপনার সোশ্যাল বা সামাজিক ফিটনেস ব্যারোমিটার; যা অর্জনে চমৎকার ভূমিকা রাখবে আপনার ব্যবহারে।
আসলে দেহের পেশির বাইরে ও আমাদের অদৃশ্য একটি পেশি আছেÑ‘সোশ্যাল মাসল’ বা সামাজিক পেশি। একে যত আমরা কাজে লাগাব, আমাদের সুখের পরিমাণ তত বাড়বে। পরস্পরের সঙ্গে আমার নিয়মিত উপস্থিতি বাড়াবে আপনার ‘সোশ্যাল মাসল’।
অভাবী আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিন। এটা আপনার প্রতি আপনার আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের অধিকার, যা আদায় করে একজন মুসলিম নিজেকে ধার্মিক পরিচয় দিতে পারবেন শুধু নয়, সামাজিকভাবে মর্যাদাবান হয়ে উঠবেন।
রমজান এলেই দেখা যায়, অসাধু ও অর্থলোভী ব্যবসায়ীদরে দৌরাত্ম্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যরে দাম বড়ে যায়। এতে দুর্বিপাকে পড়ে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবত্তি শ্রেণির মানুষ। না পারে স্বল্প আয়ে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাত, না পারে অন্যের কাছে হাত পাততে। এদের পাশে দাঁড়ানো আমাদরে কর্তব্য।
একটু খোঁজখবর করে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। কাজটা আপনার জন্য বাড়তি বা উটকো হতে পার, কিন্তু এর প্রতিফল কিন্তু অনেক! যার অন্যতম হলো সোশ্যাল ফিটনেস অর্জন। অন্তরে সহমর্মিতা লালন করুন, গীবত পরিহার করুন।
বিশ্বজনীন মমতা জাগ্রত করার মাস রমজান। তাই এই মাসে সৃষ্টির সেবায় যথাসম্ভব সময় ব্যয় করুন। নবীজি (সা.) রোজার মাসে দানের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দিতেন। কারণ এ মাসে দানের সওয়াব অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ।
তাই আপনিও রমজানে বেশি বেশি দান করুন। সঙ্ঘবদ্ধ দানের বদৌলতে আপনি পাবেন ৪,৯০০ (৭০ ঢ ৭০) গুণ সওয়াব! পাশাপাশি আপনি পরিণত হবেন সহমর্মী মানুষ।
এছাড়া রমজানে পরনিন্দা, পরচর্চা ও গীবত পুরোপুরি বর্জন করুন। কারণ এ কাজগুলো সামাজিক অস্থিরতা ও অশান্তি সৃষ্টি করে। যার পরিণাম সোশ্যাল ফিটনেস হ্রাস।
গীবত ও দুর্ব্যবহার নিজে তো করবেনই না; অন্যরা করলেও আপনি অংশ নেবেন না। আপনার সঙ্গে কেউ যেচে এসে বিবাদ করতে চাইলেও আপনি প্রশান্ত থাকুন।
জাকাত যথাযথভাবে আদায় করুন। নসিব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এমন সব সুস্থ-সবল, বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মুসলিমের জন্য জাকাত আদায় করা ফরজ। এ কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়; বরং অবশ্য পালনীয়। জাকাত আদায় না করলে ইমান পরিপূর্ণ হয় না।
জমানো অর্থের ওপর জাকাত আদায় করুন যথাযথভাবে।
যথাযথভাবে জাকাত আদায় এবং প্রকৃত গ্রহীতার মধ্যে বিতরণ করলে ধর্মীয় বিধান পালনই হয় না, সমাজে ধনবৈষম্য লাঘব হয়, দরিদ্র মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে একটা সময় সে নিজেই পরিণত হয় জাকাতদাতায়। আর এ রূপান্তরে অবদান রাখায় দৃঢ় হয় সামাজিক শক্তি। আর তাদের সঙ্ঘবদ্ধ সহযোগিতায় হাজার হাজার পরিবার হয়েছে স্বাবলম্বী।
সঙ্ঘবদ্ধভাবে সৃষ্টির সেবায় রাখুন সক্রিয় অবদান।
আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের মাস মাহে রমজান। আল্লাহ?র রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের মাস এটি। শুধু তাঁর সন্তুষ্টির নিয়তে বিধানমাফিক রোজা রাখার মধ্য দিয়ে আপনি নিজেকে একজন নিষ্পাপ মানুষে পরিণত করতে পারেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রোজা রাখো যেন সুস্থ থাকতে পারো’। রোজা রাখলে অটোফেজ নামক একটি জৈবিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে দেহকে দূষণমুক্ত করে।
শুধু রোজাদারকে সেহরি বা ইফতার করানোই নয়, তিরমিজি শরিফের একটি হাদিস মতো, রোজা না রাখা ব্যক্তিকে আপ্যায়ন করার মধ্যেও রোজাদারের জন্য আছে অসামান্য কল্যাণ
সারাদিন না খেয়ে থাকা মানে রোজা রাখা নয়। সারাদিন ঘুমিয়ে বা টেভি-সিনেমা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থেকে আপনার রোজা রাখাটাই অসার হতে পার। তাই এগুলো বর্জন করুন; স্মার্টফোন থেকে ডিলেট করুন ফেসবুক ইউটিউব টুইটার স্ন্যাপচ্যাট ইনস্টাগ্রাম নেটফ্লিক্স প্রভৃতি অ্যাপ।
শুধু খাবারেই নয়, চিন্তা, কথা ও আচরণেও সংযমী হোন। ধৈর্য ও সহনশীলতা অনুশীলনের মাস রমজান। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত। রোজাদার অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় কথা, ঝগড়া, উত্তেজনা, ও দুর্ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যরা করলেও প্রশান্ত থাকুন।
দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণে পরিকল্পিতভাবে এ মাসটিকে কাজে লাগান। রুটিন করুন কীভাবে রমজানের প্রতিটি দিন অতিবাহিত করবেন। এ সময় রোজা রাখা ও আনুষঙ্গিক ইবাদতকেই প্রাধান্য দিন।
রমজান মাসের নফল ইবাদত ফরজ আদায়ের সমান সওয়াবের। আর একটি ফরজ ইবাদত ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াবের। তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি নফল ইবাদতে মন দিন। ফজর নামাজের পর ও সারাদিন অন্তত ৩০ মিনিট পড়ুন আল কোরআন।
অসহায়বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে নিজে দান করার পাশাপাশি অন্যকেও দানে উৎসাহিত করুন।
মাছ-গোশত জাতীয় প্রোটিন এবং তেলে ভেজা খাবার বর্জন করুন। কারণ প্রোটিন পানির তৃষ্ণা বাড়ায়। খিচুড়িও পানির তৃষ্ণা বাড়ায়। তাই সেহরিতে খিচুড়ি না খাওয়াই ভালো। ডাল ও ডিম যথাসম্ভব এড়িয়ে যান।
নবীজি (সা.) ইফতার করতেন তিনটি তাজা পাকা খেজুর, নইলে তিনটি শুকনো খেজুর দিয়ে। কোনোটাই না থাকলে শুধু তিন ঢোক পানি দিয়ে। কাজেই নবীজির (সা.) সুন্নত অনুসারে খেজুর-পানি দিয়ে ইফতার করুন; মাগরিবের নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নিন। এ সময়ে খেতে পারেন ভাত, শাকসবজি, মাছ, গোশত, ডিম, ডালসহ অন্যান্য সুষম খাবার, সালাদ, লেবু, টক দই।
কলা, বাঙ্গি, আনারস পাকা পেঁপে বা কোনো মৌসুমি ফল আপনার সারাদিনের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে পার। ব্লেন্ডারে জুস না করে চিবিয়ে খান এসব ফল। বর্জন করুন পেঁয়াজু, চপ, বেগুনি, পাকোড়া ইত্যাদি ভাজাপোড়া খাবার; মসলাদার গুরুপাক ও অস্বাস্থ্যকর খাবার। এ খাবারগুলো হজমে অসুবিধা করে বুক জ্বালাপোড়া ও এসিডিটির সমস্যাও বাড়ায়।
চিনির শরবত, প্যাকেটজাত জুস ও চনিসিমৃদ্ধ খাবার পুরোপুরি বর্জন করুন।
খাদ্য-উৎসব নয়, খাদ্যসংযমের মাস রমজান। রমজানে যত খুশি খাও, এ মাসে খাবারের কোনো হিসাব নেই এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। বর্জন করুন অতিরিক্ত খাবার এবং খাবারের অপচয়।
ইফতারের আগের সময় দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়। তাই কল্যাণের জন্য দোয়া করবেন।
ইফতারের সময় খেজুর ভালোমতো চিবান। এতে খেজুরের গ্লুকোজ লালার সংস্পর্শে এসে সুক্রোজে পরিণত হয়ে দেহে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাবে। বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে ইফতারে নিয়মিত কলা খান। কলায় আছে পটাশিয়াম; যা অ্যাসিডিটি নির্মূলে সহায়তা করে।
Leave a Reply