আনলিমিটেড নিউজঃ এস. আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এর বিরুদ্ধে দ্য ডেইলি স্টারের ‘বিতর্কিত’ প্রতিবেদন ‘এস আলম’স আলাদিন’স ল্যাম্প’ বিষয়ে হাইকোর্ট এর রুল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে হাইকোর্ট ওই রিপোর্ট পরবর্তী যে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন তা বাতিল হয়ে গেল।
গত বছরের আগস্টে পত্রিকাটিতে ছাপানো ওই রিপোর্টে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই দাবি করা হয়েছিল-সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। রিপোর্টে আরো অভিযোগ করা হয়- এস আলম গ্রুপ কখনোই বিদেশে বিনিয়োগ বা তহবিল স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেয়নি। পরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন।
সরকার ও চার পত্রিকাকে আইনি নোটিশ পাঠায় এস আলম গ্রুপ। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর ১৩ আগস্টের (সোমবার) মধ্যে উল্লিখিত প্রতিবেদনগুলো সরানো না হলে, সাইফুল আলম এবং এস আলম গ্রুপের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হবে।
মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও এস আলম গ্রুপ এবং ইসলামী ব্যাংকের দেওয়া ঋণের বিষয়ে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গতবছরের ১০ আগস্ট সরকার ও চারটি জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক এবং এসব পত্রিকার আট সাংবাদিককে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
ল ফার্ম আজমালুল হোসেন কেসি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস কর্তৃক সাইফুল আলমের পক্ষে জারি করা হয় নোটিশটি।
‘এস আলম গ্রুপের আলাদিনের চেরাগ’ শিরোনামে গতবছরের ৪ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদন, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি না নিয়ে সিঙ্গাপুরে তার এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের সন্ধান পাওয়ার তথ্য জানানো হয়, সেটি নিয়ে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে এস আলম গ্রুপ। গত ৭ আগস্ট এস আলম গ্রুপের পাঠানো প্রতিবাদ জানানো হয়।
প্রতিবেদনটি ভিত্তিহীন, বানোয়াট, চরমতম অযৌক্তিক এবং সম্পূর্ণভাবে অসত্য, যেটি প্রমাণ দ্বারা অসমর্থিত। প্রতিবেদনটি প্রাথমিকভাবে বেনামি উৎস এবং বাছাই করা তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়, যা সামগ্রিক কিংবা পরিপূর্ণ ধারনা প্রদান করে না।
প্রতিবেদনটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে লিখিত এবং প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এবং ব্যক্তির এবং সত্ত্বার সাংবিধানিক অধিকার সমুন্নত না রেখে, মিডিয়া ট্রায়াল এর মুখোমুখি করার উদ্দেশ্যে, জনাব আলম এবং তার স্ত্রী এবং তাদের কোম্পানির উপর সরাসরি আক্রমন করা হয়েছে। তবে এস. আলম গ্রুপ বরাবরই দ্য ডেইলি স্টারের এই অভিযোগ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’, ‘অসত্য’, ও ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে অভিমত দিয়েছে।
পত্রিকাটিতে পাঠানো এক প্রতিবাদে বলা হয়েছে- জনাব এস আলম এবং তার, এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশে এবং বিদেশে সুপরিচিত। জনাব আলম এবং এস আলম গ্রুপ উভয়ই তাদের সকল ব্যবসায়িক উদ্যোগে, বৈধতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার সম্মতির সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনটি প্রাথমিকভাবে বেনামি উৎস এবং বাছাই করা তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়, যা সামগ্রিক কিংবা পরিপূর্ণ ধারণা প্রদান করে না।
এছাড়া- মোহাম্মদ সাইফুল আলমের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন যুক্তি দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, হাইকোর্ট একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিতে পারেন না। তিনি আরো জানান, আইনজীবী সুমনের মতো বিভিন্ন ব্যক্তি, যারা পক্ষভুক্ত নন তারা সাময়িকভাবে এই ধরনের মামলায় যুক্ত হন এবং ‘রাজনৈতিক সুবিধার জন্য’ আদালত থেকে এই ধরনের রুল পান।
এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন। আজ এই চূড়ান্ত রায় প্রদান করা হলো।
জনাব এস আলম এবং তার, এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশে এবং বিদেশে সুপরিচিত। জনাব আলম এবং এস আলম গ্রুপ উভয়ই তাদের সকল ব্যবসায়িক উদ্যোগে, বৈধতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার সম্মতির সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জনাব আলম একজন মূল্যবান জাতীয় সম্পদ এবং দেশের রাজস্বে কর প্রদানকারী সর্বোচ্চ অবদানকারীদের মধ্যে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি একজন উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী নেতা হিসাবে একটি প্রশংসনীয় খ্যাতি স্থাপন করেছেন।
উল্লেখ্য, গত বছর ৬ ডিসেম্বর ২০২২-এ ডেইলি স্টার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল: “এস আলম গ্রুপের সম্পদ অনুসন্ধান (Probe S Alam Group Assets)” শিরোনামে। এই প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) মুখ্য সচিব এবং ডিসি চট্টগ্রামকে উল্লেখ করে একটি মিথ্যা রেফারেন্স তৈরি করা হয়েছিল। পিএমওর প্রতিবাদের ফলস্বরূপ, ৭ই ডিসেম্বর ২০২২ ডেইলি স্টার দ্বারা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এটা স্পষ্ট যে, ডেইলি স্টার মিথ্যা অভিযোগ, প্রোপাগান্ডা, সরকারী কর্তৃপক্ষ এবং পিএমওকে ভুল উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ভুয়া গল্প তৈরি করতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে প্রতিবেদনটি চ্যালেঞ্জ করা হলে, ডেইলি স্টার প্রত্যাহার করা এবং সংশোধন প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি।
Leave a Reply