আনলিমিটেড ডেস্ক নিউজঃ জাপানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে এখন পর্যন্ত ৬২ জন নিহত হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম দিনেই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এতে বাড়ি-ঘর ধসে পড়েছে, ভবনে আগুন ধরেছে এবং রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও বিভিন্ন স্থানে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল জাপানের মধ্যাঞ্চলীয় নোটো দ্বীপে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬। প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, বিপর্যয়ের পর জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জরুরি সেবার কর্মীরা। তারা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, প্রায় তিন হাজার উদ্ধারকারী নোটো উপদ্বীপের বিভিন্ন অংশে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। হেলিকপ্টার থেকে দেখা গেছে যে, বেশ কিছু স্থানে আগুন লেগেছে। ভবন ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নোটোর উত্তর প্রান্তে অবস্থিত ওয়াজিমা শহরটি স্থলপথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ইশিকাওয়া প্রিফেকচারের উপকূলীয় শহর সুজুর মাসুশিরো ইজুমিয়া জানিয়েছেন, সেখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়ি সম্পূর্ণ বা প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। লোকজন বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। লোকজনকে খাবার, পানি এবং কম্বল সরবরাহ করেছে জাপানের সামরিক বাহিনী। জাপান সরকার বলছে, ৫৭ হাজার ৩৬০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারও বিভিন্ন স্থানে পরাঘাত (আশটার শক) অনুভূত হয়েছে। মন্ত্রিসভার প্রধান সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি লোকজনকে আরও কয়েক দফা ভূমিকম্পের বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
ইশিকাওয়া নোটো উপদ্বীপের ১৫৫ কিলোমিটার (৯৬.৩ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত ইশিকাওয়ায় মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে।
সোমবার (১ জানুয়ারি) জাপানের প্রধান দ্বীপ হোনশুতে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পের জেরে দেশটিতে সুনামিও আঘাত হানে। ভূমিকম্পের ১০ মিনিটের মধ্যে ইশিকাওয়ার ওয়াজিমা শহরে ১.২ মিটার (প্রায় ৪ ফুট) উচ্চতার ঢেউ আঘাত হানে।
সোমবার থেকে এ পর্যন্ত জাপানে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার একটি শক্তিশালী কম্পনসহ ১৫৫ বারের বেশি কম্পন অনুভূত হয়েছে। বেশিরভাগ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৩ থেকে ৪ মাত্রার বেশি। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপকূলীয় সুজু শহরে হাজারের বেশি বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত আগস্টে জাপানের হোক্কাইদো শহরে ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ওই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৬ কিলোমিটার গভীরে।
২০১১ সালের শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে জাপানের ফুকুশিমা প্রিফেকচারের দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সবচেয়ে ভয়াবহ পরমাণু দুর্ঘটনা ছিল এই দাইচি পরামাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়া।
অনেকেই বলছেন, এবারের ভূমিকম্প তাদের ২০১১ সালের পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ওই ভূমিকম্পে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।
Leave a Reply