আনলিমিটেড নিউজ ডেস্কঃ চার উপদেষ্টার আশ্বাস পেয়ে হাসপাতালে ফিরে গেলেন আন্দোলনরত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা। এর আগে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টা পঙ্গু হাসপাতালের সামনে আসেন। তাদের দাবি পূরণের আশ্বাসে প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর সড়ক থেকে হাসপাতালে ফিরতে রাজি হন আহতরা।
রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় অবস্থিত পঙ্গু হাসপাতাল ও পাশের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি বুধবার দুপুর ১টা থেকে হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন।
এই ব্যক্তিদের কারও এক পা নেই, কেউ হুইলচেয়ারে, আবার কারও চোখে ব্যান্ডেজ রয়েছে। তারা এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন। পরে হাসপাতালে ফিরে যেতে চারজন উপদেষ্টাকে সেখানে উপস্থিত হওয়ার শর্ত দেন।
সেই শর্ত অনুযায়ী উপদেষ্টারা না যাওয়ায় রাত ১২টার পর হাসপাতাল থেকে বিছানাপত্র এনে সামনের ওই সড়কে অবস্থান চালিয়ে যান আহত ব্যক্তিরা। কেউ শুয়ে, কেউ বসে সময় পার করতে থাকেন।
এই অবস্থা চলার মধ্যে রাত আড়াইটার সময় সেখানে হাজির হন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় সহকারী (স্বাস্থ্য) হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. সায়েদুর রহমান।
উপদেষ্টারা ভুল স্বীকার ও দুঃখপ্রকাশ করেন। আহতদের দাবি–দাওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় সচিবালয়ে বৈঠকে বসার কথা বলেন উপদেষ্টারা। আহতদের প্রতিনিধি দলের যাওয়ার জন্য দুটি গাড়ি পাঠাবেন বলে জানান তারা।
আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করে ডিসেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন এই চার উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় সচিবালয়ে আহতদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৈঠক হবে। কীভাবে তাদের পাশে সরকার থাকতে পারে, সে বিষয়ে সেখানে আলোচনা করা হবে।’
বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা আছে, ভুল আছে। আপনাদের প্রতি আমাদের অনেক অনেক অনেক বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি। চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না। কিন্তু আমরা করতে পারিনি। আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখুন, আমরা একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা দিব, লিখিত দিব।’
নিজেদের দুর্বলতার কথা স্বীকার করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘একটা ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। বহু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আসুন আমরা আলোচনার ভিত্তিতে একটা রূপরেখা তৈরি করি। সেটা ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য আপনারা একটা টিম করবেন।’
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সহকারীর দায়িত্বে আসা ড. মো. সায়েদুর রহমান আহতদের দেশের সেরা চিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা সুযোগ চাই। আমাদের একটা সুযোগ দিন। কোনো ব্যত্যয় হলে আমরা দায়িত্বে থাকব না।’
আর উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি, আপনাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করব। না পারলে তখন যা ইচ্ছা করবেন, কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে আপনাদের সুষ্ঠু চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।’
এরপর হাসপাতালে ফিরতে রাজি হন জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা। তখন উপদেষ্টারা তাদের নিয়ে হাসপাতালে ঢোকেন।
রোগীদের হাসপাতালের শয্যায় পৌঁছে দিয়ে পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীদের দেখে রাত সোয়া ৪টার পর উপদেষ্টারা বাসার উদ্দেশে যাত্রা করেন।
Leave a Reply