আনলিমিটেড নিউজ ডেস্কঃ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৮ তম জন্মদিন উপলক্ষে অজ্ঞাত স্থান থেকে নিজের ফেসবুক ভেরিফাই পেইজ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মন্ত্রী-এমপি শুরু করে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। মনে করা হচ্ছে, তাদের কেউ কেউ দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। আবার অনেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে কেউ কেউ সেনা হেফাজতেও রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে আসাদুজ্জামান খান আছেন কিনা, সেটিও জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি বাংলাদেশ সীমন্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন, বর্তমানে তিনি ভারতেই আছেন।
এদিকে, গণঅভ্যূত্থানের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবার একদিন পর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। সেই ভিডিওতে দেখা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলি করা নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে জানাচ্ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক সদস্য। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করা নিয়ে কথা বলছিলেন এই পুলিশ সদস্য।
ইকবাল নামের সেই পুলিশ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মোবাইল ফোন থেকে একটি ভিডিও দেখিয়ে বলছিলেন, গুলি করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলি করি, মরে একটা,আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বিকারভাবে মনোযোগ দিয়ে ভিডিওটি দেখেন। গুলি ও নিহতের দৃশ্য দেখে তার চেহারায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে থাকা আসাদুজ্জামান খান কামাল গত দশটি বছর যে কোন বিষয় কিংবা ঘটনা নিয়ে ঠিক এমনভাবেই নির্বাকার ছিলেন। তাকে চ্যালেঞ্জ করা বা প্রশ্ন করার মতো সাহস কারো ছিলো না। প্রবল প্রতাপে স্বরাষ্ট্রের মতো সংবেদনশীল মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করলেও, তার আমলেই খুন-গুম থেকে শুরু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগে নষ্ট হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু হবার পর থেকেই আন্দোলনকারীদের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখিয়ে আসছিলেন এই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এক পর্যায়ে কঠোর হাতে আন্দোলন দমনের হুশিয়ারীও দিয়েছিলেন আসাদুজ্জামান খান। ছাত্রলীগের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হবার কারণে ‘কমপ্লিট সাটডাউন’ থেকে পরিণত হয় শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে।
ছাত্র-জনতার দাবির মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগের পর থেকেই গা ঢাকা দেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে আন্দোলনকারীদের প্রতি নির্বিচারে গুলি চালানোর ঘটনায় আসাদুজ্জামনের বিরুদ্ধে এরিমধ্যে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাকে হন্য হয়ে খুঁজতে শুরু করে জনতা। গত ১৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর গেন্ডারিয়তে এক বাড়িতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিতি ‘সন্দেহে’ বাড়ি ঘেরাও করে স্থানীয়রা।
আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে শুধু হত্যা মামলাই নয়, ঘুষ নেয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুদক। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বস্তায় করে ঘুষ নিতেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর,পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ দিতেন বস্তা ভর্তি টাকা ঘুষ নিয়ে। শুধু তার বিরুদ্ধেই নয়, এমন অভিযোগ উঠেছে তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধেও। এমন গুরুতর অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
এর আগে, গেলো ১৩ আগস্ট সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণের জন্য আসাদুজ্জামান খান ৩০ বিঘা জমি কিনেছেন। ঢাকায় রয়েছে একাধিক বাড়ি-গাড়ি। বেশিরভাগ সম্পদ তিনি তার ছেলে সাফি মুদ্দাসির খানের নামে করেছেন। দুই কোটি দামের একটি গাড়ি রাস্তাও ফেলে দেন তিনি।
Leave a Reply