আনলিমিটেড আইন ডেস্কঃ টকশোতে উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরীকে রাজাকারের বাচ্চা বলে সম্বোধন ও অশালীন আচরণের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। একই সঙ্গে তিনি জনগণের কাছেও ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
সোমবার তাকে (বিচারপতি মানিক) লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজের কাছে লিখিতভাবে এ ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আইনি নোটিশের জবাবে সাবেক বিচারেতি মানিক লিখেছেন, তিনি একজন হাইপারটেনশন ও ডায়াবেটিসের রোগী। টকশোর দিন তাকে অনেক লম্বা পথ হেঁটে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল। ফলে তার ব্লাড সুগার নেমে যায় ও ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায় এবং একই সঙ্গে তিনি প্রচুর ক্লান্ত বোধ করছিলেন। যার কারণে তিনি তার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি তার এরূপ আচরণের জন্যে উপস্থাপিকার কাছে গভীরভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজকে তার পাঠানো আইনি নোটিশের জবাব দিয়েছেন। সেখানে তিনি উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরী এবং জনগণের কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
এর আগে রোববার উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে সাবেক বিচারপতি মানিককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে তাকে প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি উপস্থাপিকার কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে বলা হয়।
‘ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ এ নোটিশ পাঠান। প্রকাশ্য ও লিখিতভাবে ক্ষমা না চাইলে সাবেক বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
কোটা আন্দোলন ইস্যুতে সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে আয়োজিত টকশোতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। কিন্তু আলোচনার একপর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে সঞ্চালক দীপ্তি চৌধুরীর ওপর ক্ষিপ্ত হন তিনি। পুরো অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকবার উপস্থাপিকার ওপর নিজের ক্ষোভ ঝাড়েন এবং উচ্চবাচ্য করেন। শুধু তাই নয়, তিনি অনুষ্ঠান শেষে স্টুডিও ছাড়ার আগে উপস্থাপিকাকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে আখ্যা দেন। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, আলোচনা শেষে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার আগ মুহূর্তে বিচারপতি মানিক বলে ওঠেন, ‘সে তো রাজাকারের বাচ্চা।’ তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে সঞ্চালক দীপ্তি বলেন, ‘আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে রাজাকারের বাচ্চা বলার। আমি একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান।’ তখন বিচারপতি মানিক বলেন, ‘অবশ্যই। একশবার অধিকার আছে। আপনি রাজাকারের বাচ্চা।’
সঞ্চালক দীপ্তি বলেন, ‘আমি একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আপনি কোন সাহসে আমাকে রাজাকারের বাচ্চা বলেন?’ তখন বিচারপতি মানিক বলেন, ‘আপনার ব্যবহার দেখে বলেছি আমি। আপনি রাজাকারের বাচ্চা।’
তখন বিচারপতি মানিক আরও বলেন, ‘কিসের আপনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান? আপনি রাজাকারের সন্তান।’ এরপর অনুষ্ঠানের অপর আলোচক গোলাম মাওলা রনি বিচারপতি মানিককে অনুরোধ করে অনুষ্ঠানস্থল থেকে সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
টকশোটি প্রচারের পর থেকে বিচারপতি মানিকের ব্যবহার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর মধ্যেই নতুন করে অনুষ্ঠানের পরের বাগবিতণ্ডার ভিডিও আবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার চূড়ায় পৌঁছে।
Leave a Reply