দিনাজপুর থেকে ঘুরে এসে, আমিনুল ইসলাম: দিনাজপুর জেলা পরিষদের মহা দুর্নীতিবাজ উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ মানিক মিয়া ও উচ্চমান সহকারী শিরিন আক্তারের দাপটে অন্যরা অসহায়। তবে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন এই দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, মানিক এবং শিরিন ঘুষের টাকার একটি অংশ জয়নাল আবেদীনকে দিয়ে সমস্ত অপকর্ম জায়েজ করেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে জেলা পরিষদের চেয়ার-টেবিলও ঘুষ খায়। এসব ঘুষখোরদের মধ্যে উপ সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মানিক মিয়ার স্থান এক নম্বরে। এর পরই রয়েছে উচ্চমান সহকারী শিরিন আক্তার । তারা দুজনেই দিনাজপুর শহরে বিলাসবহুল বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছেন । মোহাম্মদ মানিক মিয়া মাত্র তিন বছরের ডিপ্লোমা করে সহকারি প্রকৌশলীর সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে তিনি জেলা পরিষদের আইন লংঘন করছেন, এমনটি জানান জেলা পরিষদের একাধিক কর্মকর্তা।
সরে জমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘুষখোর মানিক এডিবি উন্নয়নের ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ৪০% ঘুষ গ্রহণ করেছেন। এই ঘুষের টাকা উচ্চমান সহকারী শিরিন আক্তার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন তিনজন মিলে আত্মসাৎ করেছেন।
ভুক্তভোগীরা এ প্রতিবেদককে জানান, ঘুষ না দিলে স্কুল কলেজ, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, ৪০% কমিশন না দিলে অনুদানের টাকা দিতে চান না। সুতরাং মানিককে ৪০ শতাংশ ঘুষ দিয়ে হলেও তারা এডিবি উন্নয়নের টাকা গ্রহণ করেছেন।
এসব বিষয়ে মানিকের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি অস্বীকার করেন। তবে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় অত্যাধুনিক বহুতল বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং এ প্রতিবেদকের সম্মুখ থেকে দ্রুত শটকে পড়েন। এরপর তাকে একাধিকবার ফোন দেয়ার পরেও আর সামনে আসেননি। সরে জমিন খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, মানিক মিয়া ঘুষের টাকায় দিনাজপুরে দুটি লিচু বাগান ক্রয় করেছেন।
মানিক দীর্ঘ আট বছর যাবত দিনাজপুর জেলা পরিষদে কর্মরত। আট বছরে ফুলে ফেঁপে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, শহরের পাহাড়পুর এলাকায় তার পাঁচ তলা ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে । সেখানে উপস্থিত হয়ে মানিকের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বাড়িটির বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। মানিকের স্ত্রী বলেন, তিন কাঠা কাটা জমি কিনেছেন ২৮ লাখ টাকায়, বাড়ি করতে আরো দু কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অন্যদিকে উচ্চমান সহকারী দুর্নীতিবাজ শিরীন আক্তার শহরের মিশন রোডে বহুতল বাড়ি করেছেন। ব্যাংকেও রয়েছে আরও ৫০ লাখ টাকা । এছাড়াও শহরের বিভিন্ন জায়গায় কয়েক কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে দিনাজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারে বসে।
দুর্নীতির এসব বিষয় নিয়ে জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান এডিবি উন্নয়ন খাতে ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং রাজস্ব খাতে আরো টাকা যুক্ত হয়েছিল। রাজস্ব খাতে আরো কত টাকা যুক্ত হয়েছিল সে বিষয়টি তিনি পরিষ্কার করেননি। তবে অফিসের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান রাজস্ব খাত থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হলেও উন্নয়নের নামে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
চতুর জয়নাল আবেদীন দিনের কাছে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দকৃত টাকা ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা চাওয়া হলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান এবং তালিকা এ প্রতিবেদককে হোয়াটসঅ্যাপে দেয়া হবে। এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে আর ফোন ধরেন না তালিকাও দেননি।
জানা গেছে,জেলা পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী তিনজন ইঞ্জিনিয়ার থাকার কথা। অনৈতিক সুবিধা ভোগ করার স্বার্থে দীর্ঘদিন একজন ইঞ্জিনিয়ার কর্মরত রয়েছে। জেলা পরিষদের আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার আল আমিন পোস্টিং হয়ে দিনাজপুর জেলা পরিষদে যুক্ত হলেও কোন এক অদৃশ্য কারণে তাকে দপ্তর বুঝে দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে দিনাজপুর জেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান মোঃ দেলোয়ার হোসেন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিষদকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে। তবে স্থানীয়দের বক্তব্য এসব দুর্নীতিবাজদের চাকরি থেকে বহিষ্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা না করলে চেয়ারম্যান শত চেষ্টা করেও দিনাজপুর জেলা পরিষদকে দুর্নীতমুক্ত রাখতে পারবেন না।
Leave a Reply