আনলিমিটেড স্পোর্টস ডেস্ক :: ১৮৩ বা তার চেয়ে কম রান তাড়া করে অস্ট্রেলিয়া সর্বশেষ হেরেছিল সেই ১৯৯৭ সালে। ২০ বছর আগের সেই দলের কেউ এখন আর অস্ট্রেলিয়ার এই দলে নেই। পরিসংখ্যান তাই বাংলাদেশীদের আশার কোন আলোই দেয়নি। দিন বদলে বাংলাদেশও এখন আগের অবস্থানে নেই। কিন্তু গতকাল অজিদের বিপক্ষে তার কোন ছাপ রাখতে পারেনি মাশরাফি বাহিনী।
বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ১৬ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ১ ছিল উইকেটে ৮৩ রান। এই গ্রুপে এর আগে এজবাস্টনে নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার খেলাও পরিত্যক্ত হয়। এতে দুই দলই এক পয়েন্ট করে পায়। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ওয়ার্নার ৪০ বলে ৪৪ আর স্মিথ ২৫ বলে ২২ রান করে অপরাজিত ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট পান রুবেল হোসেন। নিজের প্রথম আর ইনিংসের অষ্টম ওভারের পঞ্চম বলে আরন ফিঞ্চকে বিদায় করেন তিনি। ফিঞ্চ ২৭ বলে ১৯ রান করে লেগ বিফোর উইকেট হন। এদিন ওয়ার্নার ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪০০০ রান পূর্ণ করেন। এতে তিনি খেললেন ৯৩ ইনিংস। এর চেয়ে কম ইনিংসে এ মাইফলক ছুঁয়েছেন কেবল হাশিম আমলা আর স্যার ভিভ রিচার্ডস।
২০১১ সালের পর এই দলের বিপক্ষে প্রথম খেলতে নেমে যেন অতীতেই ফিরে গেল বাংলাদেশ। ২০০৫এ অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথিউ হেইডেন, রিকি পন্টিং, ডেমিয়েন মার্টিন, মাইক হাসি, সাইমন ক্যাটিচ, গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পিদের অজেয় অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও ২০০৪ সালে ভারতকে হারানো ছাড়া বড় দল বলতে কেবল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টাইগারদের জয় ছিল চারটি।
টেস্ট খেলুড়ে বাকি ৬ সদস্যের বিপক্ষে টাইগাররা জয়ের স্বাদ নেয় সেই কার্ডিফ জয়ের পর। তবে গত এক যুগে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে ৯ বার হারিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাতবার, দক্ষিণ আফ্রিকাকে তিনবার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এসেছে মোট ৩৯টি জয়। ভারতকেও হারানো গেছে ৫ বার। ২০১৫তে নিজ মাটিতে পাকিস্তানকে টাইগাররা ডুবিয়েছে ৩-০তে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায়।
টেস্ট খেলুড়ে ৯ দেশের প্রত্যেকের বিপক্ষে একাধিকবার জয়ের স্বাদ নিয়েছে বাংলাদেশ। শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় বলতে ওই কার্ডিফ। কার্ডিফের সেই ম্যাচের পর আরো ১৩ বার মুখোমুখি হয়েছে দুদল। টানা ১২ হারের পর বাংলাদেশের স্বস্তিটা ছিল বৃষ্টিতে। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি ভেসে যায় বৃষ্টিতে। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নামার আগে পরস্পর ১৮ সাক্ষাতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৭বার হারের স্মৃতি টাইগারদের।
কেনিংটনের দ্য ওভালে সুযোগ এসেছিলো অস্ট্রেলিয়াকে শক্তির ঝলক দেখানোর। কিন্তু হলো না। অস্ট্রেলিয়ার এই দলটি আগের মতো অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ নয়। তারপরও বাংলাদেশ কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারলো না। ধুকতে ধুকতে হলেও মাঝপথটা আশা নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। ৪০ ওভারের পরে তামিমের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন তখনো বাংলাদেশীরা আশা করছিল দুই শতাধিক রানের ইনিংস। কিন্তু হঠাৎ ধস। যে মিচেল স্টার্ক কোন উইকেটই পাচ্ছিলেন না তার এক ওভারেই তিন উইকেট হারিয়ে ধসে পড়ে বাংলাদেশ। ৩৩ বল আগেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। স্টার্ক চার উইকেট নেন ২৯ রানে।
ব্যাটিংয়েই পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ
তামিম ইকবালের ৯৫ রানের পরেও বাংলাদেশের পুঁজি ২০০ স্পর্শ করতে পারেনি। চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেন বাংলাদেশের পরীক্ষিত ব্যাটসম্যানেরা। অস্ট্রেলিয়ার পেসার-স্পিনার কারো বিপক্ষেই সাবলীল খেলতে পারেননি তারা। স্পিনার অ্যাডাম জামপাও তার প্রথম ওভারে বিদায় করেন আশার প্রতীক সাব্বির ও মাহমুদুল্লাহকে। সাড়ে ৫ ওভার আগেই বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৮২ রানে। ব্যাট হাতে নিজের দিকে আলো টানলেও হঠাৎ ছন্দপতনে সেঞ্চুরি মিস করেন তিনি। এনিয়ে তিনবার ঠিক ৯৫ রানের মাথায় আউট হলেন তামিম ইকবাল।
ওয়ানডের শেষ ছয় ইনিংসে চতুর্থবার ৫০-ঊর্ধ রানের ইনিংস খেললেন তামিম ইকবাল। আগের পাঁচ ইনিংসে বাংলাদেশের এ ড্যাশিং ওপেনারের সংগ্রহ যথাক্রমে ৬৪, ২৩, ৪৭, ৬৫ ও ১২৮। গত মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১২৭ রানের ইনিংস খেলেন তামিম ইকবাল।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে গতকাল টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। আর দলীয় ২২ রানে প্রথম উইকেট খোয়ায় বাংলাদেশ। এরপর এক প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত এক অঙ্কের রানে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের সাত ব্যাটসম্যান। ওপেনার সৌম্য সরকার ৩, ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস ৬ ও চার নম্বরে ব্যাট হাতে মুশফিকুর রহীম করেন ৯ রান। সাব্বির রহমান ও মাহমুদুল্লাহ উইকেট খোয়ান সমান ৮ রানে। এরপর মাশরাফি ও রুবেল পরপর দুই বলে শূন্য রানে বিদায় নেন। মোস্তাফিজ চার বলে এক রান করে অপরাজিত থাকেন। তিন অঙ্কের রান করেন কেবল তিন জন। তামিম ৯৫, সাকিব ২৯ আর মেহেদী হাসান মিরাজ ১৪ রান করেন।
৩০তম ওভারের শুরুর দুই বলে অজি স্পিনার ট্রাভিস হেডকে জোড়া ছক্কা হাঁকান তামিম ইকবাল। তবে ওই ওভারেই এলবিডাব্লিউর ফাঁদে জড়ান সাকিব আল হাসান। ব্যক্তিগত ২৯ রানে উইকেট খোয়ান সাকিব। শেষ ছয় ওয়ানডেতে অর্ধশতকবিমুখ রয়েছেন বাংলাদেশের এ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আগের পাঁচ ইনিংসে সাকিব অর্ধশতক হাঁকান তিনটি।
গত এপ্রিলে শ্রলঙ্কা সফরে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৫৪ রান করেন সাকিব আল হাসান। তবে নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে ব্যাট হাতে মলিন থাকেন সাকিব। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত ১০ রানে উইকেট খোয়ান সাকিব। ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে শেষ ছয় ইনিংসে সাকিব আল হাসানের সংগ্রহ ১৪, ৬, ১৯, ১০ ও ২৯। ত্রিদেশীয় সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টি বিঘ্নিত এক ম্যাচে ব্যাট করেননি সাকিব।
মুশফিকুর রহীমের আউট নিয়েও বিতর্ক ছিল। বল তার ব্যাটে লেগে পায়ে লাগলেও আম্পায়ার তাকে লেগবিফোরউইকেট আউট দেন। কিন্তু মুশফিক রিভিউয়ের আবেদন না করে সাজ ঘরে ফিরে আসেন।
Leave a Reply