আনলিমিটেড নিউজ :: বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নূরুল আলম পুত্রের জন্য পাগলপ্রায়। পুত্র ডা. ইকবাল মাহমুদের খোঁজে কত জায়গায়ই না গেছেন তিনি। কোথাও আশ্বাস পেয়েছেন। কোথাও হয়েছেন হতাশ। জানতেন না ছেলে ফিরবে কি-না? পরিবারের অন্য সদস্যদেরও ছিল একই অবস্থা। অবশেষে বুধবার রাতে তাদের সেই অপেক্ষার অবসান হয়েছে। রাত সোয়া ১১টার দিকে আচমকাই ফিরে এসেছেন ডা. ইকবাল। তাকে ফিরে পেয়ে আনন্দের কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে সাড়ে সাত মাস আগে তুলে নেয়া হয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ইকবাল মাহমুদকে। বুধবার রাতে কে বা কারা চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে ফেলে যায় লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়কের গো-হাটা এলাকায়। পরে চোখ খুলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি শহরের হাসপাতাল রোডের নিজ বাসায় ফেরেন। বৃহস্পতিবার সকালে ডা. ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ওরা খাওয়ার সময় ছাড়া সারাক্ষণ আমার চোখ ও হাত বেঁধে রাখতো। আলহামদুলিল্লাহ, আমি আল্লাহর রহমতে ফিরে এসেছি আপনাদের মাঝে। আমাকে চোখ বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল, আবার চোখ বেঁধে রেখে গেছে। ওখানে খাওয়া-দাওয়া দেয়া হয়েছে। আমি আসলে তাবলীগের সাথী, এজন্য খাওয়া-দাওয়ার কোনো সমস্যা হয়নি। যখন যতটুকু পেরেছি খেয়েছি। তারা আমাকে যা দিয়েছে আমি তাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম। তারা আমাকে কোনো নির্যাতন করেনি, কোনো জিজ্ঞাসাবাদও করেনি। এটাই সবচেয়ে অবাক লেগেছে। আমি বারবারই জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমাকে কেন ধরা হয়েছে। তারা কোনো কথা বলেনি। তবে তাদের একজন বলেছে, চুপ থাকতে।
ডা. ইকবাল বলেন, গত বছরের ১৪ই অক্টোবর রাত সাড়ে তিনটায় সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে গাড়ি থেকে নামতে কয়েক যুবক চারদিকে ঘেরাও করে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয়। এরপর চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। কোথায় ছিলাম, কারা নিয়ে গেছে তা বলতে পারবো না। তবে রাত-দিন একটি ছোট্ট কক্ষে চোখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকত হতো। প্রায় রাতেই মনে হতো এটা আমার শেষ রাত। কত কান্নাকাটি করতাম।
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইকবাল মাহমুদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা একেএম নুরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, কি দোষ ছিল? কি অপরাধ ছিল ইকবালের। তাকে কেন অপহরণ করা হলো, কোন কিছুই ভাবতে পারছি না। আমার ছেলে কোনো অন্যায় করেনি। আমি সব সময় ভাবতাম ইকবাল সত্যি আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। এর চেয়ে বড় পাওয়া, বড় আনন্দ পৃথিবীতে আর কিছু নেই। তাকে জীবিত পাওয়ায় সবাই খুশি। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্টমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, ইকবাল জানিয়েছে অপহরণের পর থেকে তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় একটি ছোট্ট ঘরে ফেলে রাখত। ৭ মাস ১৭ দিন চোখ বাঁধা অবস্থায় ছিল সে। চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে খাওয়া-ধাওয়া দেয়া হতো।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লোকমান হোসেন জানান, ইকবালকে বুধবার রাত ১১টার দিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় নতুন গো-হাটা রাস্তার পাশে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। পরে সে বাসায় ফিরেন। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
২০১৬ সালের ১৪ই অক্টোবর রাতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড় থেকে ইকবাল মাহমুদ অপহৃত হন। ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রয়েল কোচ নামে একটি বাস সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে ধানমন্ডি ১ নম্বর রোডের কাছে এসে থামে। ইকবাল ওই বাস থেকে নেমে দাঁড়ান। সঙ্গে সঙ্গে সাত-আটজন তাঁকে ঘিরে ধরে। তাঁকে খুব দ্রুত মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায় তারা। মাইক্রোবাসের পেছনে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানও যেতে দেখা যায়। ইকবাল ২৮তম বিসিএস পাস করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে বদলি হন। গত বছরের ১০ই অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অবেদনবিদ্যায় (অ্যানেসথেসিয়া) দুই মাসের প্রশিক্ষণ নিতে ঢাকায় আসেন। তাঁর স্ত্রীও পেশায় চিকিৎসক।
Leave a Reply