আনলিমিটেড নিউজ :: গাজীপুরের শ্রীপুরে এক মা তার শিশু সন্তানকে দুধের সঙ্গে কীটনাশক পানে হত্যা করেছে। বুধবার রাতে উপজেলার চকপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আট মাসের ওই শিশুর নাম আদনান লাবীব সাদ। তার বাবা পোল্ট্রি খামারি হারুন অর রশীদ।
শিশুর বাবা হারুন অর রশীদ বলেন, বুধবার রাতে এশার নামাজ শেষে বাজার ঘুরে আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে ফেরেন তিনি। তার ঘরের আলো বন্ধ ছিল। তাদের শিশু সন্তান দু’বার বমি করেছে বলে তার স্ত্রী বীথি তাকে জানায়। শুক্রবার চিকিৎসকের কাছে নেয়ার কথা বলে তিনি শুয়ে পড়েন। তারপরও সন্তানের গায়ে হাত বুলিয়ে দেহ ঠাণ্ডা লাগছে বলে আলো জ্বালিয়ে দেখতে বলেন স্ত্রী বীথি। তিনি আলো জ্বালিয়ে শিশু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেন নিথর দেহ সন্তানের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। এ সময় তিনি কীটনাশকের গন্ধও পান। তা দেখে ‘আমার বাবা নেই’ বলে চিৎকার দিয়ে বাইরে বের হয়ে পড়েন। কান্না শুনে বাড়ির অন্যরা এসে দেখেন শিশুটির দেহ শক্ত হয়ে গেছে, মারা গেছে।
শিশুটির চাচাতো দাদা আছমত আলী বলেন, ততক্ষণে তিনিও তারাবিহ নামাজশেষে বাড়িতে ফেরেন। ঘরে ঢুকে দেখেন শিশুর কাঁথা ও কাপড়চোপর ভেজা। বৌ মা ততক্ষণে গোসল করে বারান্দায় কাপড় শোকাতে দিয়েছে। এসময় কীটনাশকের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। বাড়ির উঠোনের এক কোনায় আয়রণ ট্যাবলেটের বোতল দেখে তা হাতে নিয়ে দেখেন কীটনাশকের গন্ধ। আম গাছে ব্যবহার করা কীটনাশকের বোতলগুলো ছিল এলোমেলো। আশপাশের লোকজন এসে শিশুর মাকে জিজ্ঞেস করলে সে অগোছালো কথা বলতে থাকে। ওষুধ মনে করে কীটনাশক খাইয়ে ফেলেছে বলে সে জানায়।
বীথির শাশুড়ি হামিদা বেগম জানান, এক ছেলে এক মেয়ে রেখে বছর দেড়েক আগে তার স্বামী মারা যান। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ছেলের সংসারেই থাকছেন। নিজে রান্না করে বৌমাকে খাবার দিতেন। টিভি আর মোবাইল নিয়েই থাকতো সে। সামান্য কথা কাটাকাটিও করতাম না তার সাথে। আমার কাছে নাতিনকে সে দিতে চাইত না। তাও মেনে নিতাম। এর আগেও সে বিষ খাইয়ে আমার নাতিনকে হত্যার কথা বলেছিল। আট মাস আগে আমার ছেলের সঙ্গে মনোমালিন্য নিয়ে ঢিল ছুড়ে মোবাইল ভেঙে ফেলেছিল।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, শিশুর মুখে কীটনাশকের গন্ধ পাওয়া গেছে। শিশুটির মা দুধের সঙ্গে কীটনাশক পানে তার সন্তান হত্যার কথা স্বীকার করেছে। বেশি কান্না করায় তাকে কীটনাশক পান করার কথা সে বলেছে। সে বুঝতে পারেনি বলে অনুতাপও প্রকাশ করেছে। শিশুটির মা পারিবারিকভাবে চেয়েছিল স্বামী নিয়ে আলাদা সংসার করতে। পারিবারিকভাবে তার শাশুড়িকে সে সহ্য করতে পারতো না। আলাদা না হওয়ায় স্বামীকেও সে দেখতে পারতো না।
এসআই জানান, এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার শিশুর বাবা হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে শিশুর মা সাদিয়া আক্তার বীথির নামে একটি হত্যা মামলা করেছেন। শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত মাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply