আনলিমিটেড নিউজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া :: এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার এক মাদক কারবারির গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে জেলার আখাউড়ায়। গতকাল শনিবার সকালে দুলাল মিয়া (৫০) নামের এ মাদক কারবারির লাশ উদ্ধার করা হয়। তার বুকে চারটি গুলির চিহ্ন রয়েছে।
দুলাল মিয়া ওরফে ঠোঁটকাটা দুলাল কসবার শিমরাইল গ্রামের খুরশিদ মিয়ার ছেলে।
পুলিশ জানিয়েছে, এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে আখাউড়ার মনিয়ন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের ডোবা থেকে দুলালের লাশ উদ্ধার করা হয়। মাদক কারবারের দ্বন্দ্বের জের ধরে সে খুন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে পরিবারের দাবি, শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ দুলালকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। সকালে খবর পাওয়া যায় তার লাশ পড়ে আছে। বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া মামলায় সে জামিনে আছে বলে স্বজনরা দাবি করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত প্রায় চার মাসে ৯ জন মাদক কারবারির লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’, বাকিরা মাদক কারবারসহ অন্যান্য বিষয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে সহযোগীদের গুলিতে নিহত হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
সর্বশেষ গত ১১ মে জেলা সদরের দাঁড়িয়াপুর থেকে মো. আনিসুর রহমান খোকন নামের এক মাদক কারবারির লাশ উদ্ধার করা হয়। পৌর এলাকার কলেজপাড়ার বাসিন্দা খোকনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা ছিল।
স্থানীয় লোকজন জানায়, সকালে তারা কসবা-আখাউড়া সড়কের পাশে গুলিবিদ্ধ একজনের লাশ দেখতে পায়। খবর পেয়ে পুলিশ সকাল ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরিবারের লোকজন এসে দুলাল মিয়াকে শনাক্ত করে। ঘটনাস্থল প্রচুর রক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, লাশ পাওয়া স্থানেই সে খুন হয়।
পুলিশ জানায়, দুলাল মিয়ার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১২টি মামলা আছে। হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
দুলালের স্ত্রী হালিমা বেগম ও মেয়ে নাজমীন আক্তার জানান, শুক্রবার রাত ২টার দিকে পোশাকধারী পুলিশ তাঁদের বাড়িতে যায়। তারা ঘরে ঢুকে দুলাল মিয়াকে বের করে গাড়িতে তোলে। রাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কসবা থানায় দুলাল মিয়ার খোঁজ করা হয়। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, এমন কাউকে আটক করা হয়নি। গতকাল সকালে আখাউড়ায় লাশ পড়ে থাকার খবর পান তাঁরা।
কসবা থানার ওসি মো. মহিউদ্দিন জানান, দুলাল মিয়ার বিরুদ্ধে কসবায় থানায় সাতটি এবং কুমিল্লাসহ অন্যান্য থানায় আরো পাঁচটি মামলা আছে। তাকে ধরতে শুক্রবার রাতে পুলিশ বাড়ি যায়নি। একটি মামলায় সে সাজাপ্রাপ্ত হলেও সাজা খেটেছে কি না তা জানা নেই।
আখাউড়া থানার ওসি মো. মোশারফ হোসেন তরফদার বলেন, ‘নিহত দুলাল একজন মাদক ব্যবসায়ী। ধারণা করা হচ্ছে, নিহত দুলাল নিজ গ্রুপের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে গুলিবিদ্ধ হয়ে থাকতে পারে। তার বুকে চারটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। ’
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে ‘মাদকের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের কঠোর অবস্থান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের ‘মুখপাত্র’ হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, শীর্ষ ৪০ মাদক কারবারির তালিকা ধরে পুলিশ কাজ করছে। মাদক কারবারিরা যারা দুঃসাহস দেখাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে জবাব দিতে পুলিশ প্রস্তুত।
এর পরদিনই বাঞ্ছারামপুর উপজেলার শীর্ষ মাদক কারবারি মো. লিপন মিয়ার লাশ পাওয়া যায় জেলার কসবা উপজেলার কালামুড়া এলাকায়। পুলিশ যে ৪০ জনের তালিকা করেছে এর মধ্যে সর্বশেষ নিহত দুলালসহ অন্য আটজনের নাম রয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে শুক্রবার ভোরে ঢাকার সাভার উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তালিকাভুক্ত এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে।
Leave a Reply