আনলিমিটেড নিউজ :: দলের সব সাংগঠনিক জেলার নেতা এবং মন্ত্রিসভা ও সংসদ সদস্যদেরকে ডেকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু নির্দেশনাও দেন। দলের বর্ধিত সভায় নেতাদেরকে ডেকে এনে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বর্ধিত সভা শুরু হয়। সভায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ সদস্য, মন্ত্রিসভায় দলের সদস্য এবং সংসদ সদস্য, সব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির বিভিন্ন স্তরের নেতাদেরকে ডাকা হয়।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ের এক সপ্তাহ পর শপথ নেয় বর্তমান মন্ত্রিসভা। সংবিধান অনুযায়ী সরকারের মেয়াদের শেষ ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। এই হিসাবে ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগামী নির্বাচনকে দেশ ও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সরকার গত আট বছরের শাসনামলে কী কী কাজ করেছে তার বর্ণনা দিয়ে নেতাদেরকে বলেন এগুলোর ব্যাপক প্রচার করতে। পাশাপাশি বিএনপি ক্ষমতায় এলে কী হয়, সেটিও জনগণকে বোঝাতে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দেন।
উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা দেশের অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। এর সবগুলোই আমরা বুকলেট আকারে তৈরি করেছি। এগুলো আপনাদের দেয়া হয়েছে। আপনারা পড়বেন এবং দেশের মানুষের কাছে প্রচার করবেন।’
এর বাইরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প যেমন কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুলে ‘মিড ডে মিল’ কর্মসূচিতে অর্থ সহায়তা দিতে দলীয় স্বচ্ছল নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা, ‘চিকিৎসা সেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর জন্য আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি। যেখানে ৩০ প্রকারের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। যার মাধ্যমে মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা পাচ্ছে।’
পদ্মাসেতুর মত বড় বড় প্রকল্প সরকার হাতে নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব অনেক প্রকল্প নিয়েই দেশে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সরকার শক্তহাতে সব মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলেই দেশ নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। এখন বড় বড় প্রকল্প সরকার নিজ অর্থায়নেই করতে পারছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের থ্রি জি চালু হয়েছে। আগামীতে ফোর জি চালু করে দেব। একটা মোবাইলের মাধ্যমে বিশ্ব এখন সবার হাতে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামের মহিলাদের কোন সমস্যা থাকলে তা জানার জন্য তথ্য আপার মাধ্যমে। তথ্য আপা মেয়েদের কাছে ল্যাপটপ নিয়ে যায়, মেয়েদের সমস্যা শুনে এবং তা দূর করে দেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম, তখন বিএনপি জামায়াতের নেতা-কর্মীরা হাসাহাসি করত। কোন সমস্যা হলেই তারা সমালোচনা করতো। আজকে কি সেই তারাও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করছে না, তারা ব্যবহার করছে। এর সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উন্নয়নের সব থেকে বড় কথা হলো, আমরা তেলে মাথায় তেল দিবো না। গ্রামের নিঃস্ব মানুষ যেন সরকারের সেবা পায় সেটাই আমাদের উন্নয়নের নীতিমালা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব নেতার আদর্শ বাস্তবায়ন করা। কী পেলাম, না পেলাম সেটা বড় কথা না। কতটুকু জাতিকে দিতে পারলাম সেটাই বড় কথা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের জন্য ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু খালেদা জিয়া সরকার ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করেছিল।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির মধ্যে কোন মানবতাবোধ নাই। তাদের রাজনীতি হচ্ছে লুটে খাওয়ার। ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। সেটা আমরা ভুলে যাইনি। তারা (বিএনপি) কোন প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠুভাবে চলতে দেয় নাই। সবক্ষেত্রে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ছিল তাদের লক্ষ্য।’
বিএনপি তিন বার ক্ষমতায় ছিল জানিয়ে তারা দেশের উন্নতি করতে পারেনি কেন সে প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের উন্নয়ন হয় সেটাই সত্য এবং প্রমাণিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেশ পিছিয়ে যায়। আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি এবং খাদ্য উদ্বৃত্ত ছিলো। কিন্তু ২০০১ সালে তারা ক্ষমতায় থাকালীন সময়ে সবকিছুর উৎপাদন এবং স্বাক্ষরতার হার কমে যায়। বিএনপির নীতি হলো, ভিক্ষানীতি। বিদেশ থেকে ভিক্ষা পাওয়া যাবে তাই এখানে খাদ্য উৎপাদন করবে না। মানুষকে ক্ষুধার্ত রাখবে। গরিব মানুষ দেখিয়ে বিদেশ থেকে সাহায্য এনে নিজেরাই খাবে। আর তাতে নিজেরাই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবে। তারাতো আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা যখন মারা যান, তখন বিটিভিতে প্রচার করা হয়েছিলো তিনি পরিবারের জন্য কিছু রেখে যাননি। তাহলে এখন প্রশ্ন করতেই পারে, তার পরিবারের লোকেরা এত অর্থ-সম্পদের মালিক হয়।’
Leave a Reply