আনলিমিটেড নিউজ :: সেনানিবাস (ক্যান্টনমেন্ট) এলাকায় মলমূত্র ত্যাগ, মাতলামি ও ভিক্ষাবৃত্তি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘সেনানিবাস আইন-২০১৭’ খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে সোমবার (১৫ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট অ্যাক্ট ১৯২৪ সালের। অনেক পুরনো আইন। প্রায় শত বছরের পুরনো আইন। এটাকে পুনর্বিন্যাস করে আনা হয়েছে। পুরনো আইনে ছিল ২৯২টি ধারা। ওখান থেকে অনেক অনাবশ্যক ধারা বাদ দিয়ে, নতুন কিছু ধারা যোগ করে সর্বশেষ ২১৮টি ধারা নিয়ে আসা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘৯০ বছর আগে যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল সে ফিগুলো ও জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া নতুন আইনে বড় কোন পরিবর্তন আনা হয়নি।’ আইনে ৪৩টি অনিয়মের ক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মাতলামী করা, ভিক্ষাবৃত্তি করা, জুয়া খেলায় লিপ্ত হওয়া, রাস্তাঘাটে মলমূত্র ত্যাগ করা- এমন খারাপ জিনিস যেগুলো উপদ্রপ সৃষ্টি করে এজন্য ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে। আগে এক্ষেত্রে জরিমানা ছিল ১টাকা। ডিসিপ্লিনের জন্য এটা বাড়ানো হয়েছে।’ ‘জনগণের দৃষ্টির সামনে খোলা অবস্থায় মাংস বহন করা, কোন বিকলাঙ্গতা, ব্যাধি বা অশোভন আঘাত অনাবৃত করে প্রদর্শন করার জন্যও শাস্তি আছে খসড়া আইনে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ জরিমানা ২০ হাজার টাকা।’
আইনানুযায়ী বাসা-বাড়ির কর (হোল্ডিং ট্যাক্স) নির্ধারণের ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে দায়ী ব্যক্তিকে নোটিস দিতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এজন্য আগে ১ টাকা দণ্ড আরোপ করা হতো সে জায়গায় ৫০০ টাকা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘তথ্য প্রদানে অবহেলা ও দায় প্রকাশের বাধ্যবাধকতার শাস্তি ছিল ১০০টা। এখন এটাকে ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’
আগের আইনে দালান নির্মাণ কাজ শেষ করার সময়সীমার ক্ষেত্রে কোন জরিমানা ছিল না জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘এখন প্রস্তাব করা হয়েছে, তিনবারের বেশি সময়সীমা বর্ধিত করার আবেদনের ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৫ বারের বেশি বর্ধিত করার ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা জরিমানারা প্রস্তাব করা হয়েছে।’ ‘ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে কেউ রাস্তাঘাটের নিয়মনীতি কেউ অমান্য করলে আগে শাস্তি ছিল ৫০ টাকা। এটাকে প্রস্তাব করা হয়েছে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সিনেমা প্রদর্শনী ইত্যাদির জন্য আগে শাস্তি ছিল ২০০ টাকা। প্রস্তাবিত আইনে এটা বাদ দেওয়া হয়েছে। আতশবাজী আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি ফোটানোর জন্য শাস্তি ছিল ৫০ টাকা। এখন কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনুচিত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পতিত জমি ঘের দেওয়ার ক্ষেত্রে আগে কোন জরিমানা ছিল না, এখন বলা হচ্ছে কমপক্ষে এক হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা।’ সেনানিবাস এলাকায় বসতবাড়ির জড়াজীর্ণতার ক্ষেত্রে আগে ৫০ টাকা জরিমানা ছিল, নতুন আইনে এটাকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ও সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, ‘দালানের অত্যাবশ্যকীয় মেরামত পরিবর্তন করানোর ক্ষমতা মূল আইনে জরিমানা ছিল না। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে জরিমানা কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা।’ ‘অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে আগে শাস্তি ছিল ৫০০ টাকা। এটা কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সড়কের সরকারি ভূমি খননে ২০ টাকা জরিমানা ছিল, এখন কমপক্ষে ২ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।’
বেসরকারি বাজার বা কসাইখানা স্থাপনে শাস্তি ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লাইসেন্স ছাড়া বাজার বা কসাইখানা খোলার জন্য জরিমানা ছিল ৫০ টাকা। নতুন আইনে সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা,সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।’ শফিউল আলম আরও জানান, আগের সেনানিবাস আইনে বিনা লাইসেন্সে ব্যবসা করার শাস্তি ছিল ২০০ টাকা। এটা প্রস্তাব করা হয়েছে কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা। পশুকে আবর্জনা ইত্যাদি খাওয়ানোর শাস্তি ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। ‘অবৈধ পানি ব্যবহারের জরিমানাছিল ৫০ টাকা। নতুন আইনে কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার শাস্তি ছিল ১০০ টাকা। এটা শাস্তি প্রস্তাব করা হয়েছে কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা।’ কোন অপরাধ এই আইনের কোন ধারার আওতায় না এলে তার জন্য ২০০ টাকার জরিমানার বিধান ছিল। নতুন আইনে এ ধরনের কোনো বিধান রাখা হয়নি বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
Leave a Reply