আনলিমিটেড নিউজ বিশেষ :: ভুয়া ভোটার তৈরি করে এবং বিনা ভোটে রাজধানীর নয়া বাজারের নবাব ইউছুফ মার্কেট বণিক সমিতির কমিটি করার পায়তারা করছে বর্তমান কমিটি বলে অভিডোগ ওঠেছে। এ লক্ষ্যে গোপনে ভোটের আয়োজনও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী ২৫ মে এই মার্কেটের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই কারসাজির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, এই মার্কেটের নির্বাচনে একটি মাত্র প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। হাজী আজাদ-হাজী আলীম উল্লাহ প্যানেলে প্রার্থী হয়েছেন ১১ জন। তাদের আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি নেই। নির্বাচন করতে এই ১১ জনই মনোনয়ন উঠানো ও জমা দিতে পেরেছেন। মার্কেট কমিটির নির্বাচন কমিশন শুধু এদেরই সুযোগ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমান কমিটির আজ্ঞাবহ সাবেক লেবার অফিসার আতিক। যিনি এই মার্কেটের বণিক সমিতিতে ৩০ হাজার টাকা বেতনে চাকুরি করছেন। ফলে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম অসোন্তষ বিরাজ করছে।
অভিযোগ উঠেছে, এই আতিকই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নানা কারিশমা দেখিয়ে বর্তমান কমিটিকে পরবর্তী মেয়াদে মার্কেট পরিচালনার দায়িত্ব দিতে শ্রম দফতরে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ সমিতির নিয়ম অনুযায়ী মার্কেটের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বা এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করার কথা। এসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এই সমিতিতে চাকরিরত একজন কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বণিক সমিতির কর্মকর্তা আতিকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ’নির্বাচন তো পদবিশিষ্ট। ওপেন ডিক্লিয়ার করা হয়েছে। যারা মনোয়ন সংগ্রহ করেছেন তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।’ এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি। আরো কিছু জানতে হলে তার অফিসে যেতে হবে। এ কথা বলে ফোনটি রেখে দেন তিনি।
এদিকে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, নবাব ইউছুফ মার্কেটের ছয়টি ভবনে মোট সাড়ে ছয়শ দোকান আছে। নিয়ম অনুযায়ী মোট ভোটার হওয়ার কথা সাড়ে ছয়শ। কিন্তু ভোটার আছেন মাত্র ৪৩৯ জন। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ভুয়া ভোটার, অর্থাৎ বর্তমান কমিটির বানানো ভোটার। এই কমিটির নিয়ম হচ্ছে যারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বি তারা এই মার্কেটরে ভোটার হতে পারবেন না। এমন তিনশতাধিক দোকান মালিক আছেন যারা এখনো এই মার্কেটের ভোটার হতে পারেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নবাব ইউছুফ মার্কেটের চার নম্বর ভবনের ১৭ নম্বর দোকান মালিক হাজী আকতার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমার নিজের দোকান থাকা সত্ত্বেও আমি এই মার্কেটের ভোটার হতে পারিনি। এমনকি আমার ভাই দেলোয়ার হোসেনকে এই মার্কেটের ৩৩ নম্বর দোকানটি অথরাইজড করে দিলেও সেও ভোটার হতে পারেনি। কারণ বর্তমান মার্কেট কমিটি আমাদেরকে তাদের তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে।
এ ছাড়া ৫ নম্বর ভবনের ৪৭ নম্বর দোকানের মালিক হাজী সাহাবউদ্দিন জানান, তিনি এখনো ভোটার হতে পারেন নি। চার নম্বর ভবনের ১০ নম্বর দোকানের মালিক সোহেলও ভোটার হতে পারেননি বলে জানান।
এমন পরিস্থিতিতে রোববার বণিক সমিতির অগণতন্ত্রিক ও অসাংবিধানিক ভুয়া ভোটার ও ভোটারবিহীন অবৈধ নির্বাচন বন্ধে ওই মার্কেটে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ঢাকা বিভাগ শ্রমিক লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, মার্কেট যারা পরিচালনা করবেন তাদের সৎ, সচ্ছ ও যোগ্য হতে হবে। যাদের মধ্যে এই তিনটি জিনিস নেই তারা মার্কেট পরিচালনা করতে পারে না। তাদের দিয়ে মার্কেটের কোনো উন্নয়ন হয় না। তারাই গোপন কমিটি করে।
চার নম্বর মার্কেটের ব্যবসায়ী হাজী আকতার হোসেন বলেন, আমরা ভুয়া ভোটার ও ভোটারবিহীন নির্বাচন মানি না। এ জন্য আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি করার জন্য শ্রম দফতরে আবেদন করেছি। যাতে ভুয়া ভোটারদের বাদ দিয়ে আসল ভোটারদের অন্তর্ভূক্ত করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
Leave a Reply