আনলিমিটেড নিউজ :: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহত পাঁচ ‘জঙ্গি’র লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। নিহতদের লাশ স্বজনরা না নেয়ায় শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন রাজশাহী মহানগরীর হেতেমখাঁ কবরস্থানে লাশগুলো দাফন করে। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সংগঠক এনায়েত কবির মিলন বলেন, দুপুরে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মর্গ থেকে লাশগুলো কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করে। পরে সেখান থেকে লাশগুলো নিয়ে গিয়ে হেতেমখাঁ কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি বলেন, নিহত পাঁচ জঙ্গির স্বজনরা তাদের লাশ গ্রহণ করতে রাজি হননি। এ জন্য লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার দুপুরে মর্গ থেকে লাশ হস্তান্তরের পর ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বোমা ও গুলিতে পাঁচ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে আশরাফুল ও আল-আমিন শরীরে বোমা ছিল। বিস্ফোরণ তাদের মৃত্যু হয়। তাদের দুইজনের শরীরের সামনের অংশ পুড়ে ঝলসে গেছে।
এছাড়া বেলী আক্তার ও কারিমা খাতুন গুলি ও বোমার স্প্লিন্টারে এবং সাজ্জাদ গুলিতে নিহত হয়েছে। সাজ্জাদের কপালে, কারিমার কানের পাশে ও বেলীর বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া কারিমা এবং বেলীর বুকে ও পেটে বোমাবার বেশ কিছু স্প্লিন্টারের চিহ্ন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বেনীপুর গ্রামের একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। এরপর ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হলেও তারা সাড়া দেয়নি। পুলিশ তখন ফায়ার সার্ভিসকে ডেকে পানি ছিটিয়ে বাড়ির পেছনের মাটির দেয়ালটি ধসিয়ে ফেলতে তৎপরতা শুরু করে।
এ সময় জঙ্গিরা বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আব্দুল মতিন নিহত হন। আর আহত হন দুই পুলিশ সদস্য। এ ঘটনার পর দুই নারীসহ এই পাঁচ জঙ্গি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহুতি দেন।
নিহতরা হলেন- বাড়ির মালিক সাজ্জাদ হোসেন, তার স্ত্রী বেলী আক্তার, তাদের ছেলে আল-আমিন, মেয়ে কারিমা খাতুন ও বহিরাগত জঙ্গি আশরাফুল ইসলাম। আশরাফুলের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের চর চাকলা গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল হক।
এ পর্যন্ত যত জঙ্গি নিহত হয়েছে তার অধিকাংশের লাশ স্বজনরা নেয়নি। ফলে লাশগুলো বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।
গুলশানের হলি আর্টিজানে নিহত পাঁচ জঙ্গির মরদেহ রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।
নব্য জেএমবির নেতা তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিন জঙ্গির লাশ বেহওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।।
গত মার্চে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত দুজনসহ এক শিশুর লাশ দাফন করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা লাশ নিতে না চাওয়ায় চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার চৈতন্যগলি কবরস্থানে তিনজনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।
পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত গুলশান হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি নূরুল ইসলাম ওরফে মারজান ও তার সহযোগী সাদ্দামের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
Leave a Reply