আনলিমিটেড নিউজ ডেস্ক :: চুমু দেওয়ার সময় চোখের পাতা পড়ে। তাই নাকি! সত্যিই তো! একবার পরীক্ষা করে দেখুন, সত্যিই যায়। প্রিয়ার ঠোঁটে, সন্তানের গালে, কিন্তু ফ্লাইং কিসের জন্য নিজের হাতের তালুতে চুমু দিতে গিয়ে চোখের পাতা পড়ে যাওয়া যেনো অভ্যাস।
গভীর ভালোবাসায় প্রিয়জনকে সিক্ত করতে মানুষের মধ্যে চুমুর প্রচলন অনেক দিনের। এই চুমুরও রয়েছে বিভিন্ন ধরন। বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে যে চুমু বিনিময় হয়, এটা একরকম। স্বামী-স্ত্রী ও প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে চুমু অন্যরকম। এই চুমু অনেক সময় দীর্ঘও হয়ে থাকে। কিন্তু সব সময় তা কি নিরাপদ?
প্রেম-ভালোবাসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ চুমু। এর ইতিবাচক প্রভাব ব্যাপক। কিছু সমাজে সম্পর্ক গড়া ও টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে চুমু বড় ধরনের ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সমাজে। তারা মনে করে থাকে, গভীর আবেগে চুমু দেওয়া মানুষের সর্বজনীন আচরণ।
এর একটা বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলেছেন, আমরা চোখ বুজে রাখি কারণ আমাদের মস্তিষ্ক একই সঙ্গে দুটি কাজ করতে পারে না। মানব শরীরের নানা আচরণের মধ্যে অন্যতম রহস্যের এটি একটি যা এবার উন্মোচিত হলো।
লন্ডন ইউনিভার্সিটির রয়্যাল হোলোওয়ের মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, চুমুর সময় চোখ যদি কিছু দেখতে বা খুঁজতে থাকে তখন বোধশক্তি ভিন্নদিকে প্রবাহিত হয়। ফলে চুমুর অনুভূতিটা আর থাকে না।
স্পর্শনেন্দ্রিয়র সচেতনতা সম সময়ের দৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত। আর স্পর্শানুভূতিও তার ওপরই নির্ভর করে বাড়ে কমে, এ কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক শিক্ষক পলি ডালটন ও স্যান্ড্রা মারফি।
মনোবিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে তাদের গবেষণার আওতায় আনা নারী পুরুষদের চুমু খাইয়ে এই পরীক্ষা চালাননি, বরং দৃষ্টির পরীক্ষা নিয়েছেন। হাত দিয়ে কোনও কিছু যখন স্পর্শ করছেন তখন চোখটা কি করে সেটা তারা পরীক্ষা করেছেন।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে কেউ কেউ যখন গান করে, কিংবা নাচে তখনও তাদের চোখ বন্ধ থাকে। গান বা নাচে পূর্ণমনোনিবেশ করতেই চোখকে কোনও কিছুতে নিবদ্ধ হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সুতরাং চুমুর সময় আমরা আমাদের চোখ বন্ধ করে রাখি কারণ এর পূর্ণ স্পর্শানুভূতি আমরা পেতে চাই।
এতে দেখা গেছে চোখ খোলা থাকলে স্পর্শনেন্দ্রিয়কে ছাপিয়ে মনোজগতে চোখে দেখতে থাকা বিষয়টিই প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। মানে হচ্ছে কেউ যদি চোখ খোলা রেখে চুমু খায় তাহলে তার অনুভূতি পেতে চুমু খেতেই থাকবে। আর চোখ বুজে ঠোঁটের সামান্য স্পর্শানুভূতিই পূর্ণ তৃপ্তি দেবে।
ড. ডালটন বলেন, আমরা আমাদের দৃষ্টিপাতে বেশি নিমগ্ন থাকলে তা দারুণভাবে অন্য সকল অনুভূতিকেই দুর্বল করে দেয়।
এই দীর্ঘ চুমুর ক্ষেত্রে কারও মুখে আরেকজনের লালার মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে আট কোটি ব্যাকটেরিয়া। এসব অণুজীব অনেক সময় ঘটাতে পারে বড় ধরনে বিপদ। এরপরও মানুষ কিন্তু থেমে নেই। বিশেষ করে ভালোবাসার প্রথম চুমুর কথা কেউ কখনো ভুলতে পারে না, তা যে স্মৃতি যেমনই হোক না কেন।
নেদারল্যান্ডের গবেষকরা জানায়, প্রতি ১০ সেকেন্ড চুমুর কারণে ৮০ মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া স্থানান্তর হয়। কিন্তু তারচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া ছড়ায় করমর্দনের কারণে। জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা সত্ত্বেও চুমু আন্তরিক সম্পর্ক তৈরিতে বেশ উপকারী।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, ৫৯ শতাংশ পুরুষ ও ৬৬ শতাংশ নারী তাদের উদীয়মান সম্পর্কের ইতি ঘটিয়েছেন সঠিকভাবে চুম্বন না পাওয়ার কারণে। চুমু আমাদের সম্পর্ককে দীর্ঘায়িত করার সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। চুমু একদিকে যথার্থ সঙ্গী নির্বাচনে সহায়তা করে। অন্যদিকে, ব্রেন, জিহবা, ঠোঁট, মুখের পেশী এবং ত্বকের মধ্যে স্নায়ুবিক উত্তেজনা তৈরি করে।
একটি সুষ্ঠু এবং আনন্দঘন যৌন মিলনের জন্য চুম্বন একটি অতিপ্রয়োজনীয় উপাদান। গবেষণায় দেখা গেছে যে, চুম্বনের সময়ে ডোপামিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এটি একটি শক্তিশালী হরমোন যা কোকেনের ন্যায় মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে এবং যৌন মিলনের ইচ্ছায় শরীরে এক আনন্দময় অনুভূতির সঞ্চার করে। এছাড়া চুম্বনের ফলে শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে অক্সিটসিন নিসৃত হয় যা শক্তিশালী এক অনুভূতির সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানীরা শারীরিক মিলনের সময়ে বেশি করে চুম্বনের অভ্যাস গড়ে তোলার নির্দেশনা দেন যার ফলে একটি সুখী ও আনন্দময় দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।
Leave a Reply