আনলিমিটেড নিউজ বিশেষ ::পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি এবং দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে ।মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে সরকারের দাখিল করা প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়েছে।আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল টাইটাস হিল্লোল রেমা। এছাড়া এই রুলে পক্ষভূক্ত হতে যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় আদালতে আবেদন করেছে। আগামী ৩ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির জন্য নতুন দিন ধার্য করেছে আদালত। পদ্মা সেতু দুর্নীতি নিয়ে মিথ্যা গল্প সৃষ্টিকারী এবং প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠন করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করে হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, যোগাযোগ সচিব, আইজিপি এবং দুদকের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এছাড়া আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এই তদন্ত কমিটি গঠনে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রতিবেদন আকারে দেয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।
‘ইউনূসের বিচার দাবি, বিশ্বব্যাংক ও টিআইবি’র ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান’ শিরোনামে ১৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইনকিলাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার ঘটনা গোটা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে ওই ঘটনা ফলাও করে প্রচার করায় বাংলাদেশ এবং বর্তমান সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। সাড়ে তিন বছর আগের ওই ঘটনার পর বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি কিছু ব্যক্তিত্বের দৌড়ঝাঁপ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়াকর্ম ও মিডিয়ার অতি উৎসাহ পদ্মা সেতু ইস্যুতে সরকারতে বিপাকে ফেলে দেয়। যা ছিল সরকারের জন্য চরম অবমাননাকর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার কারণ পর্দার আড়ালে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস কলকাঠি নাড়ছেন বলে মনে করে সরকার। কানাডার আদালত পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলা খারিজ করে দেয়ার পর সবর হয়ে উঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলো। তারা এখন মনে করছেন ওই সময় পদ্মা সেতু ইস্যুতে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট করায় ড. ইউনূসকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। জাসদের নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদল ঘোষণা দিয়েছেন সিদ্ধান্ত হলে তিনি এবং মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন যৌথভাবে ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বাদী হবেন। বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ক্ষুদ্র ঋণের জনক ড. ইউনূসের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে সংসদে থাকা দলগুলো কার্যত একাট্টা হয়েছে।
কানাডার একটি আদালত পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ষড়যন্ত্র মামলা খারিজ করে দিয়ে অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দেয়ার পর আলোচিত এ ইস্যুতে সামনে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। দলটি জাতীয় সংসদে ও সংসদের বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ড. ইউনূস ও জার্মানির অর্থে পরিচালিত দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবি’র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের দাবি দেশের যারা পদ্ম সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন তাদের সবাইকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় যে অধিক অর্থ ব্যয় হচ্ছে সে ক্ষতিপূরণ বিশ্বব্যাংককে দিতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করারও দাবি জানানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী দল জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের দাবি করে বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ‘গালগপ্পের’ অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্তে ইন্ধন যুগিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূস। এজন্য ড. ইউনূসকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। শুধু তাই নয় এ ইস্যুতে সব ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়।
Leave a Reply