আনলিমিটেড নিউজ :: মানতের সাথে সবাই কম-বেশি পরিচিত। তবে মানতের আদায় করা প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যেমন- মানত কোথায় করবে, মানত কিভাবে করবে এবং মানতের বৈধতা কিংবা প্রয়োজন আছে কি না ইত্যাদি বিষয়ে। সাধারণ অর্থে মানত হলো, বিশেষ কোনো মকছুদ পূরণের লক্ষ্যে কোনো হালাল বস্তু বা প্রাণী আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করাকে মানত বলা হয়। মানতের বস্তু, প্রাণী কিংবা নগদ অর্থ অবশ্যই হালাল হতে হবে। যেকোনো উদ্দেশে হাছিলের পূর্বে অবশ্যই মানত করতে হবে এ ধরনের বাধ্যতামূলক বিধিবিধান নেই।
পূর্বেকার নবীদের যুগেও মানতের প্রচলন ছিল। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন ইমরানের স্ত্রী বলল, হে আমার প্রভু, আমার গর্ভে যা আছে তাকে স্বাধীনভাবে তোমার জন্য উৎেসর্গ করলাম, তুমি আমার পক্ষ থেকে এ সন্তানটি কবুল করে নাও, অবশ্যই তুমি শোনো ও জানো।’ (সূরা আল ইমরান : ৩৫)। হজরত ঈসা আ:-এর কোনো পিতা ছিল না। হজরত ঈসা আ: এর জন্মের পর তাঁর মাতা হজরত মরিয়ম আ: কে নিয়ে সমাজের লোকজন নানান সমালোচনা ও মন্তব্য করলে হজরত মরিয়ম আ: কে আল্লাহ তায়ালা কথা না বলার বিশেষ উদ্দেশে রোজা রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তুমি মানুষের কাউকে দেখো তখন বলবে, আমি আল্লাহ তায়ালার নামে রোজা রাখার মানত করেছি, আমি আজ কোনো মানুষের সাথে কথা বলব না।’ (সূরা মরিয়ম : ২৬)।
দান সদকার মতো মানত আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশে করা হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, আর কিছু (ব্যয় বরার জন্য) মানত করো, আল্লাহ পাক অবশ্যই জানেন।’ (সূরা বাকারা : ২৭০)। তবে মানত নিয়ে সমাজে নানান ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। তাই মানতের নিয়মকানুন জানা প্রয়োজন। যেমন- কেউ মানতের নিয়ত করল যে, অমুক (হালাল) কাজে সফল হলে পশু (ছাগল, ভেড়া, গরু ও মহিষ প্রভৃতি) দিয়ে এক শ’ এতিম ছাত্রকে ভাত খাওয়াবে। এ ধরনের মানত আদায়ের ক্ষেত্রে দোষের কিছু নেই। এতিম খাওয়ানো সওয়াবের কাজ। এতিমকে এহসান করলে আল্লাহ খুশি হন। অন্য দিকে মানতকারী ব্যক্তি যদি এরূপ মানত করেন যে, অমুক (হালাল) কাজে সফল হলে পশু (শূকর, সিংহ, শিয়াল প্রভৃতি) দিয়ে এক শ’ এতিম ছাত্রকে ভাত খাওয়াবে। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি হালাল কাজে মানত করলেও মানতের সাথে শূকরের মাংস খাওয়ানোর বিষয়টি সম্পৃক্ত থাকায় মানতটি অবৈধ। কুরআন ও হাদিস অনুমোদিত বৈধ বিষয় দিয়ে মানত আদায় করতে হবে। আবার কেউ নিয়ত করল, আমার ছেলে পরীক্ষায় কৃতকার্য হলে দশবার অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করব। এটি বৈধ হবে না। নফল নামাজ আদায় ও অজু করার বিষয়টি উত্তম কাজ হলেও কোনো নামাজ আদায়ের আগে দশবার অজু করার বিধান নেই। এ জন্য ওই ব্যক্তির মানতের নিয়ত শুদ্ধ হবে না। আবার কেউ যদি কোনো বিষয়ে মানত করে এবং মানত আদায়ের আগে ইন্তেকাল করেন। তাহলে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকাররা মৃত ব্যক্তির পক্ষে মানত আদায় করতে হবে। এ-সংক্রান্ত বিষয়ে হজরত আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, হজরত সাদ ইবনে উবাইদা রা: হজরত রাসূল সা:-এর কাছে মানতের কথা জিজ্ঞাসা করেন, যা তাঁর মায়ের জিম্মায় ছিল, তাঁর মা মানত পূর্ণ করার আগে ইন্তেকাল করেন। হজরত রাসূল সা: বললেন, ‘তুমি তার পক্ষ থেকে তা আদায় করো।’ (মুসলিম শরিফ : ৪০৮৯)। হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের আনুগত্য করার মানত করে, সে যেন অবশ্যই তার আনুগত্য করে। আর যে তার অবাধ্যতার কোনো বিষয়ে মানত করে, সে যেন তার নাফরমানি না করে।’ (বুখারি : ২/৯৯১)। আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে যেকোনো সৎকর্ম করাই হলো একটি উত্তম কাজ। মানতও একটি সৎকর্ম। মানতের নিয়ত সামর্থ্য অনুযায়ী করতে হবে। অসম্ভব ও কাল্পনিক বিষয়ে মানত করা যাবে না। যে বস্তু দিয়ে মানত আদায় করা হবে, তা ক্রয় করা বা উৎসর্গ করার মতো সামর্থ্য মানতকারীর অবশ্যই থাকতে হবে। তবে কোনো ব্যক্তি বিশেষকে খুশি করার উদ্দেশ্যে কোনো মানত করা কিংবা মানত আদায় করা যাবে না। মানত আদায়ের প্রতিদান শুধু আল্লাহ তায়ালাই দিতে পারেন। পরিশেষে আল্লাহ সবাইকে মানতের বিধি বিধান বুঝে মানত আদায়ের তৌফিক দান করুক। আমিন।
লেখক : প্রবন্ধকার
Leave a Reply